বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান

জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নেতারা

মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে দেশের গুটিকয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক মুনাফা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে লুটে নিচ্ছে তারা। আর এসব দেখভালের দায়িত্ব যেসব সরকারি সংস্থার, তাদের সক্ষমতা সীমিত। তাই জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নজির নেই বলে অভিযোগ করেছে ভোক্তা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তবে কারা এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নাম বলেনি সংগঠনটি।

জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন সংগঠনটির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। এ সময় বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, ক্যাব ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি এম শামস এ খান, ভোক্তা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিয়া প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে গোলাম রহমান বলেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত মুদ্রা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা অত্যাবশ্যক। কারণ, বাজারে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল নয়। সরবরাহ সামান্য কমলেই ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। অনিয়ন্ত্রিত মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণের ফলে দেশের গুটিকয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নির্ধারণে কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করছে।

গোলাম রহমান আরও বলেন, কখনো ভোজ্যতেল, কখনো চিনি অথবা পেঁয়াজ, আদা, ডিম, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি পণ্যের সরবরাহে সংকট তৈরি করে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে লুটে নিচ্ছেন। অনেক সময় সরকারের কিছু নীতিও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে অতি মুনাফার সুযোগ করে দেয়। আবার সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা একেবারেই কম। তাতে বড় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার নজির নেই বললেই চলে।

সংবাদ সম্মেলনে এম শামসুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সেখানে সুদহার কত নির্ধারিত হবে, সেটা নাকি মন্ত্রণালয় ঠিক করে দেয়। মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে পরামর্শ দেয়। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরিচালিত হয় এবং সেখানেও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা হয়। ব্যবসা হবে প্রতিযোগিতাপূর্ণ, কিন্তু সেখানে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে মন্ত্রণালয় ব্যর্থ। আমরা ভোক্তাদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় চাই, যে মন্ত্রণালয় অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রভাবিত হবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য বিভাগ ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ ও বিক্রির ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি ওঠে। এ ধরনের উদ্যোগ নিলে তা মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছে ক্যাব। ভোক্তা অধিকারের জন্য কাজ করা সংগঠনটির ধারণা, সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এমন উদ্যোগ গ্রহণের নীতি থেকে দূরে থাকার ফলে অনেক সময় জনস্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না।

ক্যাবের সংবাদ সম্মেলনে টিসিবির বাজারদর উদ্ধৃতি করে বলা হয়, গত এক বছরে অধিকাংশ পণ্যেরই মূল্যবৃদ্ধি ছিল অনেক বেশি। অনেকে মনে করেন, সাধারণ মানুষের জীবনে মূল্যস্ফীতির আঁচ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে বা ধারকর্জ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন। এতে অনেক চাহিদাই পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের জীবনমানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন সংগঠনটির নেতারা।