বাংলাদেশ ভারত পতাকা
বাংলাদেশ ভারত পতাকা

ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে লাভবান হতে চাইলে সবার আগে দেশের সরবরাহব্যবস্থার দুর্বলতা কমিয়ে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়ানোয় জোর দেওয়া দরকার। দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই পরামর্শ দিয়েছেন।

তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে বিনা মাশুলে ট্রানজিট/ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রস্তাবের কথা জানানাো হয়। এ ছাড়া বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সিইপিএ) সইয়ের ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা এসব সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাঁরা বলছেন, বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য অংশীদারত্ব বাড়ালে বাংলাদেশ অনেক দিক থেকে লাভবান হতে পারে। তবে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে ও সতর্কতার সঙ্গে অংশীদারত্ব চুক্তির আলোচনায় বসার পরামর্শ দেন তাঁরা।

তাঁরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ—এই ত্রিমাত্রিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে। বাণিজ্য বলতে শুধু পণ্য নয়, সেবা খাতও আছে। বিনিয়োগের জন্য ভারতকে মোংলা ও মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের জন্য নৌ ও রেলপথসহ একাধিক সরবরাহব্যবস্থা আছে। সুতরাং ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পাশাপাশি ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নিয়েও লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ। এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে বাংলাদেশও লাভবান হবে। কারণ, এখানে পণ্য বানিয়ে তা আবার ভারতেই রপ্তানি করা যাবে।

এসব সুবিধা পেতে হলে সবার আগে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যাতায়াত ও সরবরাহ খাতের দুর্বলতা কমানো এবং প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। ভালো যোগাযোগব্যবস্থা থাকলে দ্রুততম সময়ে পণ্য পরিবহন করা সম্ভব। কিন্তু অবকাঠামোগত অনেক বিষয় এখনো অসম্পন্ন রয়ে গেছে। সীমান্তে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক সময় লেগে যায়। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া পণ্যের মানসনদ নিয়ে আমরা পারস্পরিক স্বীকৃতি চুক্তি (এমআরএ) করতে পারি। এসব করা গেলে বাণিজ্যে গতি বাড়বে।’

ট্রানজিট সুযোগকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও এর মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ব্যবধান শিগগিরই কমবে না বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, ‘ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে নেপাল ও ভুটানে প্রবেশের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান করে বাণিজ্য বাড়ানো যেতে পারে। তবে এ উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে আমাদের যে বিশাল বাণিজ্য ব্যবধান, তা তাৎক্ষণিকভাবে কমানো যাবে না।’ এ ছাড়া অবকাঠামো সুবিধা ভালো না থাকাকেও দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন তিনি। রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘আমাদের স্থলবন্দর ও সড়ক অবকাঠামোকে ভারতের সমপর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। না হলে ট্রানজিট সুবিধা খুব একটা কাজে আসবে না।’

অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সিইপিএ) হলে বাণিজ্য বাড়তে পারে বলে মনে করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ভারতের আমদানি বাজার অনেক বড়। সেখানে আমাদের রপ্তানির অংশ বাড়ানোর সুযোগ আছে। তবে চুক্তির আলোচনা সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে।’

সিপিডির বিশেষ ফেলো বলেন, ভারত বাংলাদেশকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত শূন্য শুল্কসুবিধা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ যদি সিইপিএ চুক্তিতে যায়, তাহলে ভারতকেও সমান সুবিধা দিতে হবে। অর্থাৎ ভারতীয় পণ্যে শূন্য শুল্কসুবিধা দিতে হবে। এতে রাজস্ব কমে যাওয়ার একটা শঙ্কা তৈরি হবে। তাই অংশীদারত্ব চুক্তি হলেও এই শূন্য শুল্কসুবিধা যেন অব্যাহত থাকে তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’

আর ভারতের সঙ্গে সমন্বিত চুক্তির বিষয়ে রিজওয়ান রাহমান বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারত বড় অংশীদার। সুতরাং প্রস্তাবিত চুক্তিতে ভারত স্বাভাবিকভাবে বেশি সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে সহজে প্রবেশাধিকারও পাবে। তাই বাংলাদেশের সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাণিজ্য বাধাগুলো দূর করতে হবে।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি সম্পর্কে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভারত থেকে পণ্য আমদানি অনেক বেশি হচ্ছে। এতে সমস্যা দেখছি না। কারণ, ভারত অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদের পণ্য দিচ্ছে। আবার ভারত থেকে আনা অনেক কাঁচামাল রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়া ভারত থেকে অনেক কম সময়ে পণ্য আমদানি করা সম্ভব। আর ভারতে ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের যে বাজার আছে, সেখানে আমরা কেন অংশ বাড়াতে পারছি না, সেটাও চিন্তা করা প্রয়োজন।’