পশ্চিমা বিশ্ব ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার চ্যালেঞ্জগুলো কী
চলতি মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তিন দিনব্যাপী উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলনের শেষ দিন সকালে লোকবক্তৃতা দেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিশ্বের ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এবং এর প্রভাবে বদলে যাওয়া আন্তর্দেশীয় সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে কথা বলেন তিনি। গতকাল প্রকাশিত তাঁর বক্তৃতার প্রথম অংশে তিনি জানিয়েছেন, নতুন এই সমীকরণের কারণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আজ প্রকাশিত হলো তাঁর বক্তৃতার দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি।
বিশ্বদরবারে চীন নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চায়। সে জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমর্থন লাভে বেশ কিছু বহুপক্ষীয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দেশটি। চীনের তথাকথিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা অঞ্চল ও পথ’ শীর্ষক কর্মসূচি একধরনের অর্থনৈতিক হাতিয়ার।
এই কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চীনের প্রভাব বিস্তার করা। চীনের নীতি হচ্ছে ঋণের বিনিময়ে ভোট, অর্থাৎ তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঋণ দেবে এবং বিনিময়ে সেই দেশগুলো জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে চীনের পক্ষাবলম্বন করবে। এর উদ্দেশ্য দ্বিমুখী। প্রথমত, এর মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বের বিপুলসংখ্যক দেশকে চীনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের সদস্য সব উন্নয়নশীল দেশের ভোট বাগিয়ে চীনকে পরাশক্তি হিসেবে তুলে ধরা।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকার কারণে চীনের হাতে বিপুল পরিমাণ তহবিল আছে, আর সেই অর্থ দিয়ে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সমর্থন কিনে নেওয়ার সক্ষমতাও রয়েছে তাদের। বাস্তবে দেখা যায়, যেসব দেশ চীনের কাছে অতিমাত্রায় ঋণী যেমন পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে, অর্থাৎ এশিয়া ও আফ্রিকার এই দেশগুলো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও বিশেষায়িত সংস্থার ভোটাভুটিতে চীনের পক্ষাবলম্বন করে। আবার ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানে চীনের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা অঞ্চল ও পথ উদ্যোগভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ ছাড়িয়ে যাবে।
শিল্পায়িত পশ্চিম ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্য
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও বৃহত্তম বাণিজ্যের দেশ হিসেবে চীনের বৈশ্বিক গুরুত্ব খাটো করে দেখা যাবে না। চীন যে কারণে অনন্য সেটা হলো, বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে যেকোনো ধরনের পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে তার বিপুল সক্ষমতা। শ্রমঘন শিল্পে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য—সব ক্ষেত্রেই এই সক্ষমতা রয়েছে। ধনী শিল্পায়িত দেশগুলোর তুলনায় চীনের মাথাপিছু আয় ও মজুরি এখনো অনেক কম, সে জন্য তারা এখনো শ্রমঘন শিল্পে উৎপাদিত পণ্য উন্নত দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারে। একই সঙ্গে তারা প্রযুক্তিঘন পণ্য তুলনামূলকভাবে সস্তায় উন্নত দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারে।
চীনের রপ্তানির এই ধরন তার আমদানির চাহিদা নিরূপণ করে। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে তারা মূলত খনিজ, জ্বালানি ও কৃষির প্রাথমিক পণ্য ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি করে। নিজের শিল্প চালাতে দেশটিকে এসব পণ্য আমদানি করতে হয়। শিল্পায়িত দেশগুলো থেকে চীন মূলত উচ্চ প্রযুক্তি আমদানি করে, কারণ এ ক্ষেত্রে তার এখনো কিছু দক্ষতার ঘাটতি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের অভাব আছে। এই বহুবিধ শিল্প সক্ষমতার কারণে চীন বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত হতে পেরেছে, অনেক ধরনের পণ্য তারা সরবরাহ করতে পারে।
দেখা যায় বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে চীনের বড় ধরনের অসমতা রয়েছে। তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বিপুল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আছে। এটা যে কেবল দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা ও ভারসাম্যহীনতা তৈরি করছে তা নয়, বরং পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতেই তা একধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে। শিল্পায়িত দেশগুলোর মধ্যে কেবল নিকটতম প্রতিবেশীদের সঙ্গেই চীনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও হংকং। কিন্তু আমাদের আলোচনার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য অসমতা।
অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের শ্রমঘন শিল্পে উৎপাদিত পণ্য চীনের বাজারে খুব একটা যায় না, বরং তারা এসব পণ্য শিল্পায়িত দেশগুলোতে রপ্তানির জন্য অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক পণ্য, রাসায়নিক ও প্রযুক্তি যন্ত্র প্রতিযোগিতামূলক দামে আমদানির জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল।
অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য চীন আমদানির উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। সে জন্য দেখা যায় চীনের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি আছে। এমনকি এশিয়ার আরেকটি বৃহৎ অর্থনীতি ভারত বর্তমানে চীন থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার মাত্র ১৩ শতাংশ তারা সে দেশে রপ্তানি করে (চীন থেকে ভারতের আমদানি ১১৮ বিলিয়ন ডলার, আর রপ্তানি করে ১৫ বিলিয়নের ডলারের পণ্য)। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম হলো খনিজ উৎপাদন ও রপ্তানিকারক আফ্রিকার দেশগুলো, তাদের সঙ্গে বরং চীনের বাণিজ্য ঘাটতি আছে।
অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো বাণিজ্যের জন্য শিল্পায়িত পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল, অর্থাৎ এই দেশগুলোর শ্রমঘন শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি বাজার হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। বিশেষ করে যেসব দেশের সম্পদ নেই কিন্তু শ্রমের প্রাচুর্য আছে, সেই সব দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই নির্ভরতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টা হলো এই দেশগুলোকে বিদেশি মুদ্রা অর্জনের জন্য শ্রমঘন শিল্পে উৎপাদিত পণ্য পশ্চিমা দেশগুলোতে রপ্তানি করতে হয়। এসব দেশের পক্ষে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ বা রপ্তানি গন্তব্য বদলে ফেলা সহজ কাজ নয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জলজ্যান্ত উদাহরণ, অর্থাৎ শিল্পায়িত পশ্চিমা দেশ ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই যে বৈপরীত্য, সেটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রকট হয়ে ওঠে। চীন আমাদের আমদানির বৃহত্তম উৎস হলেও (দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত) রপ্তানির অর্থাৎ তৈরি পোশাক রপ্তানির মূল গন্তব্য হচ্ছে শিল্পায়িত পশ্চিমা দেশগুলো।
গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা
এই ক্রমবর্ধমান জটিল হয়ে ওঠা বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বহিঃস্থ অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন করা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষ সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ হলো শিল্পায়িত পশ্চিম ও উদীয়মান চীনা ব্লকের সঙ্গে (যার মধ্যে এখন রাশিয়াও আছে) ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার জন্য অর্থনৈতিক কূটনীতি পরিচালনা করা। বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির উত্থানের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। যেমন এশিয়ার দুই বড় শক্তি চীন ও ভারত; এরা পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। এখন তারা প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ আরও সমুন্নত করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যেসব দেশের জ্বালানি ঘাটতি আছে, সেই সব দেশের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তেল রপ্তানিকারক মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা, যে মধ্যপ্রাচ্য আবার নিজেই জটিল ভূরাজনীতির আবর্তে পড়েছে।
চীনের ঋণ মূলত সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট। ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অতি প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের এই ঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু সহজে এ ধরনের বাণিজ্যিক ঋণ পাওয়ার ঝুঁকি হলো এতে যেকোনো দেশের ঋণের বোঝা বেড়ে যেতে পারে। আগেও বলা হয়েছে, চীন প্রত্যাশা করে যে ঋণী দেশগুলো আন্তর্জাতিক ফোরামে চীনকে সমর্থন করবে। যদিও চীনের অবস্থান ওই দেশগুলোর নীতিগত অবস্থানের বিপরীত হতে পারে।
সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলো সংখ্যালঘু মুসলমানদের নির্যাতন নিয়ে জাতিসংঘে চীনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনেছিল। কিন্তু ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর সহযোগিতায় চীন শুধু এই প্রস্তাব ভোটাভুটিতে নাকচ করে দিয়েছে, তা–ই নয়, বরং তাদের মানবাধিকার রক্ষার রেকর্ড নিয়ে এসব দেশগুলোর কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে। আদর্শিক দিক দিয়ে দেখা যাচ্ছে, চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে যে উন্নয়নের মডেল নিয়ে যাচ্ছে, সেটা মূলত রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে বাজারব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মতো পশ্চিমে ধারণার ওপরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে স্থান দেওয়া হয়েছে। যেসব উন্নয়নশীল দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার রয়েছে, তাদের কাছে চীনের মডেল আকর্ষণীয় হতে পারে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে যাদের সম্পর্ক তিক্ত, তাদের কাছে।
অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের, বিশেষ করে যারা অর্থনীতিকে বহুমুখী ও প্রযুক্তিগতভাবে হালনাগাদ করার চেষ্টা করছে, তাদের পক্ষে শিল্পায়িত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বড় স্বার্থ আছে।
এ ধরনের সম্পর্কের সুবিধা বহুবিধ: শ্রমঘন উৎপাদন শিল্পের জন্য রপ্তানি সুবিধা থেকে শুরু করে বিদেশি সহায়তা পাওয়া বা স্বল্প সুদের দ্বিপক্ষীয় বা আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ পাওয়া এবং পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করার সুযোগ। এর বদৌলতে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ এসব উন্নয়নশীল দেশে আসে। এ ধরনের সম্পর্কের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা নিতে হলে এই দেশগুলোকে শাসনব্যবস্থা উন্নত করতে হবে, সেই সঙ্গে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন থেকে শুরু করে মানবাধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করতে হবে।
পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত স্বার্থে বৈষম্যপূর্ণভাবে এসব মানদণ্ড প্রয়োগ করতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এসব শর্ত পূরণের মূল্য নেই, তা নয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানুষের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো নিজ গুণেই গুরুত্বপূর্ণ।
চ্যালেঞ্জসমূহ
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে এসব মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয় ঘটিয়ে এমন কৌশল গ্রহণ করা, যাতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। জনগণের চোখে একটি সরকারের যত বৈধতা থাকে এবং ভোটের মাধ্যমে যদি সেই বৈধতা অর্জিত হয়, তাহলে সেই সরকারের পক্ষে সম্ভব নিজ স্বার্থের সঙ্গে দেশের স্বার্থের সমন্বয় করা।
একই সঙ্গে কর্তৃত্ববাদী ও নিপীড়ক সরকারের পক্ষে এটা করা কঠিন হবে—বাধার মুখে পড়বে সেই সরকার। এ ধরনের একটি সরকার, যা রাজনৈতিকভাবে দুর্বল, তা বিদেশি সরকার ও তাদের সমর্থনপুষ্ট বহুজাতিক কোম্পানির চাপে নতজানু হবে—এমন সম্ভাবনা বেশি। তারা তখন শোষণমূলক অর্থনৈতিক চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হবে।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও নৈপুণ্যের মান বজায় রাখা। বিষয়টি হলো কোনো উন্নয়নশীল দেশ যখন রপ্তানিমুখী ও আমদানি প্রতিস্থাপনমূলক শিল্পে উৎকর্ষ লাভ করে, তখন অন্য কোনো দেশের সঙ্গে একপক্ষীয় সুবিধা–সংবলিত চুক্তি করা সম্ভব নয়, তখন তাকেও শুল্কছাড় দিতে হয়। উদাহরণ হিসেবে ভিয়েতনামের কথা বলা যায়। দেশটি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুরক্ষামূলক চুক্তি করেছে, যেমন জাপান, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সম্প্রতি তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও এমন চুক্তি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভিয়েতনামের মানবাধিকারের বিষয়টি উপেক্ষা করতে পারে এ কারণে যে ভিয়েতনাম একপক্ষীয়ভাবে বাণিজ্য সুবিধা নেয় না। সেই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক বিষয় তো আছেই—ভিয়েতনাম ও চীনের মধ্যকার গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিষ্ক্রিয় করে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটন ও হ্যানয়ের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, সেই চুক্তির বদৌলতে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মাইক্রোচিপ ও সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি পাবে। আবার এ বিষয়ে ভারত ও মালয়েশিয়ারও আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য এটি জরুরি শিক্ষা, কারণ বাংলাদেশ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণ ঘটাতে যাচ্ছে। তখন আমরা এলডিসিভুক্ত দেশের বাণিজ্য সুবিধা দাবি করতে পারব না।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।
অনুবাদ প্রতীক বর্ধন