পেঁয়াজ আমদানি অনুমতির পরই খাতুনগঞ্জে দাম কমা শুরু

তিন দিনের ব্যবধানে খুচরায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ১০০ টাকায় উঠেছে। দাম বাড়তে থাকায় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল বগুড়ার রাজাবাজার মোকামে
সোয়েল রানা

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের তিন সপ্তাহ পর পেঁয়াজের কেজি যখন ৯০ থেকে ১০০ টাকায় উঠল, ঠিক তখন পণ্যটি আমদানির বিধিনিষেধ তুলে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এদিকে সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার পরপরই চট্টগ্রামের পাইকারি খাতুনগঞ্জ বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। ঘোষণার পর গতকাল রোববার পাইকারিতে প্রতি কেজিতে অন্তত পাঁচ টাকা দাম কমেছে বলে জানা যায়।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গত ১৪ মে সীমিত পর্যায়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারকে চিঠি পাঠান। তখনই এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে প্রতি কেজি দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় গতকাল প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনাবেচা হয়েছে প্রতি কেজি ৯০–১০০ টাকা দরে।

কৃষি মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আজ সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

পেঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা থেকে আমদানির অনুমতি বা আইপি নিতে হয়।

মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে অন্তত ৫ টাকা কমে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খাতুনগঞ্জের মেসার্স এস এম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) শেষ দিকে ৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। কাল (আজ) দাম আরও কমার সম্ভাবনা আছে।’

বাজারে পেঁয়াজের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত মাসের এ সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০–৫৫ টাকা কেজি দরে। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৪০-৫০ টাকার মতো বেড়েছে। আর গত বছর এই সময়ে পেঁয়াজের দর ছিল ৩৫–৪০ টাকা কেজি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০–৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।

বর্তমানে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮–৩০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি উন্মুক্ত থাকায় পেঁয়াজ আমদানি বেশি হয়েছিল। তখন দেশি পেঁয়াজের বাজারদর ছিল কম, প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। চাষে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল।