ট্রানজিটের পণ্য পরিবহনে কলকাতার বন্দরের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের সমঝোতা
ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মাধ্যমে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নিয়মিতভাবে পণ্য পরিবহনের পথ খুলেছে প্রায় পাঁচ মাস আগে। এর মধ্যে কোনো চালান আনা–নেওয়া হয়নি। এখন এই পথে ট্রানজিটের পণ্য পরিবহনের সব সেবা দেওয়ার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।
ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের সেবা দেওয়ার জন্য ভারতের কলকাতার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সোমবার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দরের মিলনায়তনে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়।
সাইফ পাওয়ারটেক জানায়, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কলকাতার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সাইফ পাওয়ারটেক ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচনে কাজ করবে। শ্যামা প্রসাদ বন্দর শুধু ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের জন্য নতুন জেটি–সুবিধা চালু করবে।
সমঝোতা স্মারকে সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন এবং শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দরের পরিবহন বিভাগের ব্যবস্থাপক রাজহানস সই করেন। এ সময় কলকাতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দরের চেয়ারম্যান রথেন্দ্র রমন উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে জানতে চাইলে তরফদার রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলকাতার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর হয়ে সড়কপথে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরীক্ষামূলক চালান আনা–নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের জন্য নিয়মকানুন জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। ভারতের ব্যবসায়ীদের কম খরচে ও কম সময়ে এই সুবিধার সুফল তুলে দিতে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের পরিপূর্ণ সেবা দিতে চাই আমরা। আগামী বছরের শুরুতে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম–মোংলায় নৌপথে জাহাজ নামাবে সাইফ পাওয়ারটেক। আবার এই দুই বন্দর থেকে ট্রানজিটের পণ্য সড়কপথের মাধ্যমে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরিবহনের সব সেবাও দেব।’
ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে (আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল ও মেঘালয়) পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বেশি লাগে। যেমন কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব শিলিগুড়ি হয়ে প্রায় ১ হাজার ৬১৯ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে এই দূরত্ব প্রায় ৫৭৫ কিলোমিটার। সাধারণত ট্রাকে শিলিগুড়ি হয়ে দূরত্ব অতিক্রম করতে ছয় থেকে সাত দিন সময় লাগে। অন্যদিকে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দর থেকে চট্টগ্রামে বন্দর হয়ে মাত্র চার দিন সময় লাগে।
এ অবস্থায় কম খরচে ও কম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের সড়ক দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনে দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে আসছিল ভারত। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের অক্টোবরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার বিষয়ে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে এ–সংক্রান্ত চুক্তি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এ-সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতির মান বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়।
এরপর ২০২০ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রথম পরীক্ষামূলক চালান আনা-নেওয়া হয়। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে আরও কয়েকটি চালান পরীক্ষামূলকভাবে আনা-নেওয়া হয়। গত এপ্রিলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক স্থায়ী আদেশের মাধ্যমে নিয়মিত ট্রানজিট পণ্য আনা–নেওয়ার আদেশ জারি করে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাইফ পাওয়ারটেক বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি বড় টার্মিনাল পরিচালনা করছে। বন্দরকেন্দ্রিক নানা সেবার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।