দেশে ধান উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ জেলা নওগাঁয় সব ধরনের চালের দাম কমেছে। গত দুই সপ্তাহে নওগাঁর পাইকারি মোকামে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তাতে খুচরায়, অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে সরু চালের দাম। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ভোক্তাদের মধ্যে।

দেশে চালের অন্যতম বড় মোকাম নওগাঁয় ৮০টি স্বয়ংক্রিয় (অটো) চালকল রয়েছে। আর হাস্কিং মিল রয়েছে ১ হাজার ১৬০টি। এখানকার মোকামে চালের দাম বাড়লে বা কমলে তার প্রভাব পড়ে সারা দেশের বাজারে। মঙ্গলবার নওগাঁর বৃহত্তম চালের মোকাম সদর উপজেলার মিলগেটে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা জিরাশাইল চাল পাইকারিতে ২ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় ও কাটারিভোগ ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মিলমালিকেরা বলছেন, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম পাইকারিতে প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

পাইকারিতে কম দামে চাল পাওয়ায় খুচরাতেও আমরা কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা কমিয়ে বিক্রি করতে পারছি।
উত্তম কুমার সরকার, সাধারণ সম্পাদক, নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারে ব্যবসায়িক সমিতি।

পাইকারি বাজারে চালের দাম কমার প্রভাব পড়েছে নওগাঁর খুচরা বাজারেও। সরেজমিন আলাপকালে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের খোলাবাজারে বিক্রিসহ (ওএমএস) বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু থাকায় এবং আউশ ধান বাজারে উঠতে শুরু করায় নওগাঁর মোকামে দুই সপ্তাহ ধরে মোটা ও মাঝারি চালের দাম নিম্নমুখী। গত বোরো মৌসুমে উৎপন্ন হওয়া মোটা চালের (ব্রি উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাত) প্রতি কেজির দাম দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, তা কমে এখন ৪১ থেকে ৪২ টাকায় নেমেছে। মাঝারি চাল হিসেবে পরিচিত ব্রি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৫০-৫২ টাকা।

এদিকে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের পছন্দের তালিকায় থাকা সরু চালের দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে, কেজিতে চার থেকে ছয় টাকা। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা পাওয়া যাচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকায়। কাটারিভোগের প্রতি কেজির দাম কমে হয়েছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৬২-৬৪ টাকা।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারে ব্যবসায়িক সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গরিব খেটে খাওয়া মানুষেরা সাধারণত মোটা চাল কিনে থাকেন। খোলাবাজারে কার্ডধারী গরিব মানুষেরা দুই মাসের চাল একসঙ্গে পাচ্ছেন। এ জন্য দু-তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে মোটা চাল কেনার গ্রাহক নেই বললেই চলে।

চাহিদা না থাকায় মোটা চালের দাম কেজিতে এক–দুই টাকা কমেছে। এ ছাড়া আউশ ধান বাজারে উঠতে শুরু করায় মিলমালিকেরা গুদামে মজুত থাকা বোরো মৌসুমের মাঝারি ও সরু চাল বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কমিয়ে ছাড়তে শুরু করেছেন। পাইকারিতে কম দামে চাল পাওয়ায় খুচরাতেও আমরা কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা কমিয়ে বিক্রি করতে পারছি।’

একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকুরে লুৎফর রহমান নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে বলেন, চালের দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। কেজিতে দু–তিন টাকা কমে কোনো লাভ নেই। সিন্ডিকেট করে চালের দাম সব সময় বাড়তি রাখা হয়। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। এ জন্য ভালোভাবে বাজার মনিটরিং করা দরকার সরকারের।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রেখেছে। এ কারণে মোকামে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে উৎপন্ন হওয়া আউশ ধান বাজারে উঠতে শুরু করেছে। মোকামে চাল বিক্রি কমে যাওয়ায় মিলমালিকেরা ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন।

ফলে বাজারে প্রতি মণ আউশ ধান এখন ৮০০–৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে পাইকারিতে সব ধরনের চালের দাম কমেছে। চালের দাম কমে যাওয়ায় যেসব ব্যবসায়ী ভরা মৌসুমে প্রতি মণ জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধান ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে কিনেছিলেন, তাঁদের লোকসান দিয়ে এখন চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।’