মুঠোফোনে নির্ধারিত হয় ডিমের দাম, দেওয়া হয় খালি ক্রয় রসিদ

সরবরাহ প্রতিষ্ঠান থেকে ডিম কেনার পর সঙ্গে দেওয়া হয় খালি ক্রয় রসিদ। ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয় মুঠোফোনে। আগের রাতে জানিয়ে দেওয়া হয় বাজারদর। পরদিন ওই দামেই বিক্রি করা হয় ডিম। চট্টগ্রামে ডিমের পাইকারি বাজারে এভাবেই চলছে ডিমের বেচাকেনা। আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ডিমের আড়তে অভিযানে গিয়ে এমন চিত্র দেখতে পান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

বাজারে আল আমিন স্টোর নামের একটি পাইকারি দোকানে গিয়ে কর্মকর্তারা দেখতে পান, ক্রয় রসিদে নিজেই দাম লিখেছেন বিক্রেতা। কর্মকর্তাদের তিনি জানান, ডিম সরবরাহের সময় খালি রসিদ পাঠিয়ে দেন সরবরাহকারীরা। রাতে ডিমের দাম মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই দাম নিজেরাই বসিয়ে দেন খুচরা বিক্রেতারা।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের মেসার্স ইয়াসিন ট্রেডার্স ও মায়ের দোয়া ডিমের আড়ত থেকে ডিম সরবরাহ করা হয় আল আমিন স্টোরে। সেখান থেকেই খালি রসিদ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাতে দাম জেনে নিয়ে রসিদে লেখেন বিক্রেতা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার বলেন, মুঠোফোনে সরবরাহকারী দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা রসিদে কোনো মূল্য লেখেনি। তিনি জানান, ক্রয় রসিদে ‘কারসাজির অপরাধে’ আল আমিন স্টোরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মুঠোফোনেই নির্ধারণ করা হয় দাম
অভিযান চলাকালে মোহাম্মদ দিদার নামের অন্য আরেক ব্যবসায়ী দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ব্যবসা করছেন তাঁরা। সরবরাহকারীরা খালি রসিদ পাঠিয়ে দেন। রাতে মুঠোফোনে খুদে বার্তায় জানানো হয় দাম। সেই দামেই পরদিন বিক্রি হয় ডিম।

এ সময় মুঠোফোনে থাকা একটি ‘ডিজিটাল রসিদ’ দেখান তিনি। তাতে দেখা যায়, আকারভেদে ডিমের দাম লেখা রয়েছে। মোহাম্মদ দিদার দাবি করেন, এভাবেই ব্যবসা করে আসছেন তাঁরা। কখনো ক্রয় রসিদে দাম লেখেন না সরবরাহকারীরা।  

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ১০০টি ডিমের দামে দোকানভেদে মূল্যের পার্থক্য ৬০ থেকে ৭০ টাকা। পাহাড়তলী বাজারের মুখে প্রতি ১০০টি মুরগির ডিমের (লাল) দাম ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ১৬০ টাকা। অথচ বাজারের ভেতরের দোকানগুলোতে দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২২০ টাকা। মুঠোফোনে নিজেদের মতো দাম নির্ধারণের কারণেই এমন তফাৎ বলে জানিয়েছেন বাজারে আসা ক্রেতারা।

জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, বিক্রেতাদের দাবি, তাঁরা সঠিক দাম মুঠোফোনে জেনে লিখছেন। তবে এতে সঠিক দাম যাচাইয়ের সুযোগ থাকছে না। চাইলেই মূল্য বাড়িয়ে লিখতে পারেন ব্যবসায়ীরা।

বাজারে অভিযানের খবর পেয়ে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান অন্তত ১৫ ব্যবসায়ী। দাম তদারকিতে বাজারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অভিযানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

খুচরা-পাইকারিতে তফাৎ অন্তত ৩০ টাকা
পাইকারি বাজারের দাম হিসেবে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা। অথচ খুচরা পর্যায়ে গতকাল রোববার রাতে ও আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রামে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা। খুচরা পর্যায়ে কোনো কোনো মুদিদোকানে ১৮৫ টাকায় প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার ও কাজীর দেউরি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি ডজন ডিমে গত ৯ দিনে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা।

এ ব্যাপারে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ক্রয় রসিদে নিজের ইচ্ছেমতো দাম বসিয়ে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভ করছেন। এ বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।