২০২৪ সালের বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে এসঅ্যান্ডপির ১০ পূর্বাভাস

শেষ হয়ে আসছে ২০২৩। দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২৪ সাল। এই সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থা আগামী বছরের অর্থনীতি নিয়ে পূর্বাভাস দিচ্ছে। ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের মার্কেট ইন্টেলিজেন্স বিভাগ ২০২৪ সালের অর্থনীতি নিয়ে ১০টি পূর্বাভাস দিয়েছে। দেখা যাক, তারা কী বলছে।

মূল্যস্ফীতির হার আরও কমবে

২০২২ সালের শেষ দিক থেকে সারা বিশ্বে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি যে হারে কমতে শুরু করেছিল, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে তার হার আবার কিছুটা কমে যায়। মূলত সেই সময় জ্বালানির দাম আবার বেড়ে যাওয়া এবং খাদ্য ও জ্বালানির দামবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার একই থাকায় এ প্রবণতা দেখা গেছে। তবে মূল্যস্ফীতি কমার ধারা আবার শুরু হয়েছে এবং ২০২৪ সালে তা অব্যাহত থাকবে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ; ২০২৩ সালে যা ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে তা সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬ শতাংশে উঠেছিল।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি

২০২৪ সালে উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের প্রবৃদ্ধির হার প্রত্যাশামাফিক হবে না। এ অঞ্চলের দেশগুলো মূল্যস্ফীতির হার কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে, প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার সঙ্গে তার মিল রয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করা হয়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ভালো হবে, সে কারণে সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি খুব বেশি খারাপ হবে না।

চীনের প্রবৃদ্ধি ধীরলয়ে চলবে

চীন সরকার অর্থনীতি চাঙা করতে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। দেশটির বেসরকারি খাতের আস্থা ফিরে আসছে এবং আবাসন খাতের সমস্যাও শেষ হয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসঅ্যান্ডপির পূর্বাভাস, ২০২৪ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে এই হার ৫ দশমিক ৪ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

উন্নত দেশে নীতি সুদহার কমবে

অধিকাংশ দেশেই মূল্যস্ফীতির হার কমে এসেছে এবং তা লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে চলে আসবে বলে প্রত্যাশা। এই বাস্তবতায় ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্বের উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নীতি সুদহার কমাতে শুরু করবে বলে ধারণা করছে এসঅ্যান্ডপি ইন্টেলিজেন্স। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ট্রেজারি ও বন্ধকি বন্ড বিক্রি করে অর্থ প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে।

উদীয়মান বাজারে সুদহার

যেসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যে মুদ্রানীতির রাশ ছাড়তে শুরু করেছে, তারা তুলনামূলকভাবে আগে থেকে রাশ টানতে শুরু করেছিল। লাতিন আমেরিকায় মূল্যস্ফীতির হার তুলনামূলক দ্রুতগতিতে কমেছে। সেসব দেশের শ্রমবাজারের অবস্থা অতটা টান টান নয়। ফলে চিলি, ব্রাজিল ও পেরুর মতো দেশে মুদ্রানীতির রাশ ছাড়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের প্রথম ভাগে মেক্সিকোর নীতি সুদহার কমানো হতে পারে।

কমবে বিনিময় হার

মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ২০২৪ সালে কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার কমে আসা এবং চলতি হিসাবের ঘাটতি জিডিপির অনুপাতে বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বিনিময় হারে প্রভাব পড়বে। তবে সমজাতীয় অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় জাপানি মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময় হার ২০২৪ সালে বেশি হারে বাড়বে।

প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাধা অব্যাহত থাকবে

উচ্চ নীতি সুদহারের প্রভাব দীর্ঘায়িত হবে বলে ধারণা করছে এসঅ্যান্ডপি। সেই সঙ্গে কোভিডজনিত যেসব সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছিল, তার প্রভাব খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। এসব কারণে ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে যাবে। ফলে অনেক দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সতর্ক অবস্থান নেবে। তারা হয়তো বেশি বেশি জামানত চাইবে; যাদের সক্ষমতা কম, তাদের ঋণ পাওয়ার পরিমাণ কমে যাবে। পরিণতিতে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে।

পশ্চিম ইউরোপে আবাসন ব্যয়

ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়া ও ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে যাওয়ার কারণে ২০২৪ সালে পশ্চিম ইউরোপে বাড়ির দাম কমবে। বাজারের এই সংশোধন কোন দেশে কীভাবে হবে, তা নির্ভর করবে গত এক দশকে সেসব দেশের আবাসন বাজারে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে, তার ওপর। অর্থাৎ যেখানে ভারসাম্যহীনতা বেশি, সেখানে বাজার সংশোধনের সময় বেশি লাগবে।

নির্বাচন ও নীতিগত অনিশ্চয়তা

২০২৪ সাল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশ, ভারত, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশীল রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে আগামী বছর নির্বাচন হতে যাচ্ছে; এসব নির্বাচনী প্রচারণা ও ফলাফল নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে এসঅ্যান্ডপি। সেই সঙ্গে আগের বছর জুন মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন হবে। তবে মার্কিন নির্বাচন ঘিরে যে অনিশ্চয়তা আছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

জ্বালানি রূপান্তর

যুক্তরাষ্ট্রের কারণে বেশ কিছু নীতিগত পরিবর্তন এসেছে। দেশটি পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করায় অবকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়বে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র আগামী বছরও মন্দা থেকে দূরে থাকতে পারবে বলে মনে করছে এসঅ্যান্ডপি। অন্যদিকে কানাডায় বেশ কিছু কার্বন শোষণ যন্ত্র স্থাপন করার কারণে অবকাঠামোগত ব্যয় বাড়বে।