পোশাক আমদানিতে শুল্কহার কমানো নয়, বাড়ানো দরকার

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক–কর হ্রাস বা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার শেয়ারবাজারে মূলধনি মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হয়। বাজেটের এসব উদ্যোগের প্রভাব কী হতে পারে—তা নিয়ে কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তা ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের অভিমত নিয়ে এবারের মূল আয়োজন।

আজহারুল হক সভাপতি, বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতি (এফইএবি বা ফ্যাশন উদ্যোগ)

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে আমদানি করা নারী, পুরুষ ও বাচ্চাদের ১৭২ ধরনের তৈরি পোশাকে সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বাজেটে। চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছর সম্পূরক শুল্ক কমানোর পর তৈরি পোশাক আমদানি বেড়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক। এর বাইরে স্থানীয় পোশাকের আলাদা শিল্পও গড়ে উঠেছে। তাহলে কোন উদ্দেশ্যে বিদেশি পোশাক আমদানিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে ঢালাওভাবে বিদেশি তৈরি পোশাক আমদানিকে উৎসাহিত করলে অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে দেশীয় প্রতিষ্ঠান।

দেশীয় ফ্যাশনশিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো সারা বছর প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কাজ করে থাকে। এ কাজে গ্রামের নারীরাও যুক্ত থাকেন বিভিন্নভাবে। সরবরাহ ব্যবস্থায় অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সংখ্যাও অনেক। সব মিলিয়ে অনেক খাতের তুলনায় দেশীয় ফ্যাশনশিল্পে কর্মসংস্থান বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে বিদেশি পোশাক আমদানিকে উৎসাহ দিলে প্রান্তিক বয়নশিল্পী, কারুশিল্পী কিংবা সূচিকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে কাজ হারাবে। ফলে দেশের স্বার্থে বিদেশি পোশাক আমদানিতে শুল্কহার কমানো নয়; বরং বাড়ানো দরকার। এতে করে দেশীয় শিল্পের পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

বাজেটে দেশীয় সরবরাহকারীর কাছ থেকে উপকরণের বিপরীতে ৩ শতাংশ উৎসে কর আরোপের কথা বলা হয়েছে। আমাদের ফ্যাশনশিল্পের বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক। প্রান্তিক মানুষ এটা ম্যানেজ করতে পারবে না। এতে করে তারা নিরুৎসাহিত হবে। প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হবে। তাতে তৈরি পোশাকের দাম বেড়ে যাবে।

দেশের সব শিল্পকে একইভাবে বিবেচনা করলে হবে না। শিল্পের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে করারোপ করা দরকার। দেশীয় ফ্যাশনশিল্প দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে লালন করে। রাষ্ট্রের উচিত এমন শিল্পকে উৎসাহ দেওয়া, প্রণোদনা দেওয়া। তা না হলে দেশীয় শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। তাঁতজাতীয় পণ্য বিক্রিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া দরকার। তাহলে ক্রেতারাও উৎসাহ পাবেন। অন্যদিকে যারা তাঁত পণ্য বিক্রি করবে, তাদের প্রণোদনা দেওয়া দরকার। কারণ, তারা গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে অবদান রাখছে।

করোনার পর থেকে একের পর চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশীয় ফ্যাশনশিল্প। টানা ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর। এতে করে পোশাকের বিক্রি কমে গেছে। অনেকেই লোকসান গুনছেন। বর্তমান বাস্তবতায় ফ্যাশনশিল্পের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য থোক বরাদ্দ থাকা দরকার। তাহলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা টিকে থাকার জন্য রসদ পাবেন।

আজহারুল হক

সভাপতি, বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতি (এফইএবি বা ফ্যাশন উদ্যোগ)