প্রার্থীদের খেলাপি ঋণের তথ্য নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে যাচ্ছেন ব্যাংকাররা

ব্যালট বাক্সপ্রতীকী ছবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল আজ সোমবার। বিকেল পাঁচটার পর প্রার্থীদের ব্যাংকঋণ–সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে ব্যাংকারদের উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কেউ আজ উপস্থিত হন, কেউ হবেন কাল বা পরের দিন।

সরকারের নির্দেশনায় এসব তথ্য যাচাই করে ব্যাংকগুলো থেকে পরে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে, যাতে ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকেরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন।

ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালকেরা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ বা কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এমনকি কোনো প্রার্থী যদি অন্য কারও ঋণের জামিনদারও হন এবং সেই ঋণ খেলাপি হয়ে যায় তাহলে তিনিও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আজ এসব বিষয় উল্লেখ করে ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রার্থীদের ব্যাংকের ঋণ খেলাপ সংক্রান্ত তথ্য সংকলন ও সরবরাহ’ শীর্ষক একটি পরিপত্র জারি করেছে। পরিপত্র জারির আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনের মতামত নিয়েছে এ বিভাগ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক আজ প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(১) অনুচ্ছেদের আলোকে এ পরিপত্র জারি করা হয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচন সামনে থাকায় অনেক গ্রাহক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যাংকে এসেছেন, যা ব্যাংক খাতের জন্য ইতিবাচক দিক।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে কোনো ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ বা তার কোনো কিস্তি খেলাপি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কিংবা সংসদ সদস্য হিসেবে থাকার অযোগ্য হবেন।

বাংলাদেশে ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান প্রথম কার্যকর হয় ১৯৯১ সালে। এর পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনের আগেই খেলাপিমুক্ত হওয়ার জন্য এক শ্রেণির প্রার্থীকে ব্যাংকে তৎপর হতে দেখা যায়। কেউ কিস্তি পরিশোধ করে খেলাপি তালিকা থেকে নাম সরান, আবার কেউ আদালত থেকে আইনি সুরক্ষা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী যদি ঋণখেলাপি কোনো কোম্পানি, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সম্মতি ছাড়া সেই পদত্যাগ কার্যকর হবে না। পাশাপাশি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশোধন করাও বাধ্যতামূলক।

পরিপত্র অনুযায়ী, প্রার্থীদের ঋণখেলাপি–সংক্রান্ত তথ্য মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন বা তার আগেই ব্যাংকারদের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে সরবরাহ করতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হবে প্রার্থীদের ঋণসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করা এবং কোনো খেলাপি প্রার্থী আছেন কি না, তা নিশ্চিত করা।

জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বা অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া প্রার্থীদের তালিকার সঙ্গে ব্যাংকের হালনাগাদ খেলাপি ঋণগ্রহীতার তালিকা মিলিয়ে দেখতেও ব্যাংকারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শাখাভুক্ত কোনো খেলাপি ব্যক্তি প্রার্থী হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।

যেসব প্রার্থী নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে ব্যাংক হিসাব বা ঋণ হিসাব পরিচালনা করেন, তাঁদের তথ্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবেন। এসব তথ্য বিশেষ দূত, ফ্যাক্স বা ই–মেইলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখায় পাঠানো হবে।

নির্বাচন কমিশন দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসককে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনাররাও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসহ মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বিকেল পাঁচটার পর ব্যাংকের প্রতিনিধিদের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে।

কিশোরগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তা (জেলার ডিসি) মোহাম্মদ আসলাম আলম আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা ব্যাংকঋণ–সংক্রান্ত যেসব তথ্য দাখিল করেছেন সেগুলো সংগ্রহ করতে ব্যাংকাররা এসেছেন। এ ব্যাপারে কাজ চলছে।

প্রায় একই কথা জানান চাঁদপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা (জেলার ডিসি) নাজমুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেন, ‘যতটুকু দেখলাম, কাগজপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীরা এবার বেশ সচেতন। আশা করছি, ব্যাংকাররা এগুলো মিলিয়ে দেখবেন।’

সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। আপিল দায়ের করা যাবে ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি এবং তা নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২১ জানুয়ারি।

জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের এমডি মজিবুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকাররা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহের পর সিআইবি যাচাই করে তা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে।