সাক্ষাৎকার

পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেটর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি যখন বৈশ্বিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, তখন গৃহস্থালি যন্ত্রপাতিতেও পরিবেশ সচেতনতার প্রয়োজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রেফ্রিজারেটর ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র। তবে এটি সারা দিন চালু থাকার কারণে পরিবেশের ওপর ফেলতে পারে নেতিবাচক প্রভাব। তাই পরিবেশবান্ধব বা ইকোফ্রেন্ডলি রেফ্রিজারেটর হয়ে উঠছে এখন সময়ের দাবি। পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেটর কীভাবে কাজ করে, এর আবশ্যকতা কী—এসব বিষয়েই প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের হেড অব ব্র্যান্ড মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন সোহেল কিবরিয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দিনার হোসাইন হিমু

প্রথম আলো:

বর্তমানে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হচ্ছে, যা মানুষের দৈনন্দিন পণ্য ব্যবহারের প্রসঙ্গেও প্রযোজ্য। পরিবেশবান্ধব বা ইকোফ্রেন্ডলি রেফ্রিজারেটরের গুরুত্ব কতখানি?

সোহেল কিবরিয়া: পরিবেশবান্ধব বা ইকোফ্রেন্ডলি রেফ্রিজারেটর সেগুলোই, যা পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। সাধারণ রেফ্রিজারেটরের তুলনায় এ ধরনের রেফ্রিজারেটরে সাধারণত এমন রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করা হয়, যা ওজোন স্তরের ক্ষতি করে না এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম করে। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেটর বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী প্রযুক্তির মাধ্যমে শক্তির অপচয় হ্রাস করে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমে।

প্রথম আলো:

কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে সেটিকে আমরা পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ বলতে পারি? ক্রেতারা কীভাবে বিষয়টি নিশ্চিত হবেন?

সোহেল কিবরিয়া: একটি পরিবেশবান্ধব ফ্রিজের প্রথম এবং অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো, এতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। প্রচলিত সাধারণ ফ্রিজগুলোতে ব্যবহৃত হয় সিএফসি–জাতীয় গ্যাস। অপর দিকে পরিবেশবান্ধব ফ্রিজে ব্যবহৃত হয় আর-৬০০–এ গ্যাস, যার গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল অনেক কম। শুধু প্রযুক্তিই নয়, পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ তৈরির উপকরণেও থাকে বিশেষত্ব। এগুলোতে রিসাইক্লেবল ও টক্সিনমুক্ত প্লাস্টিক ও ধাতু ব্যবহার করা হয়; যাতে এগুলো ভবিষ্যতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয় এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল আবর্জনা কমে। ক্রেতারা একটি ফ্রিজ পরিবেশবান্ধব কি না, তা নিশ্চিত করতে এই বৈশিষ্ট্যগুলো খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

‘মিনিস্টার রেফ্রিজারেটর’ কিনলে ক্রেতারা পাচ্ছেন আকর্ষণীয় উপহার জেতার সুযোগ। ছবি: মিনিস্টারের সৌজন্যে
প্রথম আলো:

বিদ্যুৎ–সাশ্রয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ কতটা সুবিধাজনক?

সোহেল কিবরিয়া: পরিবেশবান্ধব ফ্রিজে সাধারণত ইনভার্টার কম্প্রেসর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যা ফ্রিজের তাপমাত্রা অনুযায়ী নিজে থেকে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে; অর্থাৎ যখন তাপমাত্রা স্থিতিশীল থাকে, তখন কম্প্রেসর কম বিদ্যুৎ খরচ করে ধীরে চলে। আর যখন প্রয়োজন পড়ে, তখনই পূর্ণগতিতে কাজ করে। এতে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ হয়। এ ধরনের ফ্রিজে আরও থাকে উন্নত থার্মোস্ট্যাট সেন্সর এবং ইকো মোড ফিচার, যা ফ্রিজের অবস্থা অনুযায়ী শক্তি সাশ্রয় করে।

প্রথম আলো:

ফ্রিজের ব্যবহারে কার্বন নিঃসরণ কমানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে সেটি নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন?

সোহেল কিবরিয়া: ফ্রিজের ব্যবহারে কার্বন নিঃসরণ কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা আমাদের সামনে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গৃহস্থালি যন্ত্রপাতির মধ্যে ফ্রিজ এমন একটি যন্ত্র, যা প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এবং এর শক্তি ব্যবহার ও রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস উভয়ই পরিবেশে কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখে।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের বাজারে পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেটরের প্রাপ্যতা কেমন?

সোহেল কিবরিয়া: প্রাপ্যতা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সচেতন ভোক্তা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে এই ধারা ভবিষ্যতে আরও বেগবান হবে বলে আশা করা যায়। পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেটর এখন কেবল প্রিমিয়াম সেগমেন্টের পণ্য নয়। দেশীয় উৎপাদনের ফলে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারাও এ ধরনের ফ্রিজ কিনতে পারছেন। ফলে এটি এখন অনেকটাই গণপ্রাপ্যতায় পৌঁছেছে। শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

প্রথম আলো:

ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে রেফ্রিজারেটরের ক্ষেত্রে কী ধরনের উন্নয়ন আশা করা যায়?

সোহেল কিবরিয়া: বর্তমানে ব্যবহৃত আর-৬০০এ-এর চেয়ে কম গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়ালযুক্ত গ্যাস বা বিকল্প প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের দিকে যাবে এই ইন্ডাস্ট্রি, যা ওজোন স্তরের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ হবে। সোলার পাওয়ার্ড ফ্রিজ বা বিকল্প নবায়নযোগ্য শক্তিচালিত ফ্রিজ সাধারণ হয়ে উঠবে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল বা অফ-গ্রিড এলাকায়। এতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সম্ভব হবে।

প্রথম আলো:

আপনাদের প্রতিষ্ঠানের রেফ্রিজারেটর নিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

সোহেল কিবরিয়া: মিনিস্টার রেফ্রিজারেটর উৎপাদিত হয় দেশীয় কারখানায়, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবল কাজে লাগানো হয়। ফলে দাম তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হলেও মানের ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হয় না। ক্রেতারা চান এমন একটি ফ্রিজ, যা বিদ্যুৎ কম খরচ করে, দ্রুত ঠান্ডা হয়, দীর্ঘদিন ভালো সার্ভিস দেয় এবং দামে সাশ্রয়ী হয়। মিনিস্টার সব সময়ই সেই চাহিদা পূরণ করে আসছে।

পণ্যের পাশাপাশি মিনিস্টারের বিক্রয়োত্তর সেবা ও সার্ভিস নেটওয়ার্কও ক্রেতাদের সন্তুষ্টির বড় কারণ। দেশের শহর থেকে শুরু করে মফস্‌সল অঞ্চলেও আমাদের সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। কোনো ধরনের সমস্যা হলে দ্রুত সহযোগিতা পাওয়া যায়, এটি গ্রাহকের আস্থাকে আরও শক্তিশালী করেছে।

প্রথম আলো:

প্রথম আলো ডটকম আয়োজিত রেফ্রিজারেটর মেলায় আপনারা অংশ নিয়েছেন। পাঠক এবং আপনাদের গ্রাহকদের উদ্দেশে কী বলার আছে?

সোহেল কিবরিয়া: রেফ্রিজারেটর মেলায় অংশ নিতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী ফ্রিজগুলো পাঠক ও ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটি পরিবার বা প্রতিষ্ঠান যদি সচেতনভাবে পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ বেছে নেয়, তবে এটি জলবায়ুকে স্থিতিশীল করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। এ জন্যই আমরা পাশে আছি সেরা প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ নিয়ে।

প্রথম আলো:

ধন্যবাদ আপনাকে।

সোহেল কিবরিয়া: আপনাকেও ধন্যবাদ।