আবারও নীতি সুদ বাড়াল ফেড, তবে হার কমল

মার্কিন ডলার
ছবি: রয়টার্স

প্রত্যাশামতো নীতি সুদহার আবারও বাড়াল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। এ নিয়ে এক বছরে আটবার নীতি সুদহার বাড়াল ফেড।

টানা কয়েকবার তা বাড়ানোর কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। সে কারণে এবার নীতি সুদ বৃদ্ধির হার কমে এসেছে। এর অভিঘাতে মার্কিন ডলারের তেজ কিছুটা কমেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ডলারের বিপরীতে ইউরোসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মুদ্রার দর বেড়েছে।

গতকাল বুধবার বছরের প্রথম মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠকে ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট নীতি সুদহার বাড়িয়েছে ফেড। গত বছরের মার্চের পর নীতি সুদহার বৃদ্ধির হার এটাই সবচেয়ে কম। ফলে ফেডের নীতি সুদ এখন ৪ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশের মধ্যে উঠে এসেছে। খবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের।

ফেডের পর আজ বৃহস্পতিবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নীতি সুদহার বৃদ্ধি করবে বলে জানা গেছে।

এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে নীতি সুদহার ছিল প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু গত বছর বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। তা মোকাবিলায় গত বছর মোট সাতবার নীতি সুদহার বাড়ায় ফেড। সেই ধাক্কায় মূল্যস্ফীতির হার এবার কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ডিসেম্বরে তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে। গত বছরের জুনে তা ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ১ শতাংশ উঠে যায়।

ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির রাশ টানা গেছে, যদিও কিছু পণ্যের দাম এখনো বাড়তির দিকে। অর্থাৎ কাজ এখনো শেষ হয়নি।

পাওয়েলের এ ঘোষণার প্রভাব মার্কিন ডলারের বিনিময়মূল্যে পড়েছে। গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের দিন শেষে ইউএস ডলার ইনডেক্স ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ১০০ দশমিক ৮০–তে নেমে আসে। এর আগে তা ছিল ১০০ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট। বুধবার ১ শতাংশের বেশি দর পড়েছে গ্রিনব্যাক খাত এ মুদ্রার, যার ব্যবহার বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই করে থাকে।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার ইউরোর দর ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এক ইউরোর বিপরীতে এখন ১ দশমিক ১০৩৪ ডলার। পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ। অস্ট্রেলীয় ডলারের দর বেড়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দর বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজ ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে নীতি সুদ বাড়াবে। এতে কিছুটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

২০২২ সালে ডলারের উত্থান
পৃথিবীতে যত লেনদেন হয়, তার ৮০ শতাংশের বেশি হয় আমেরিকান ডলারের মাধ্যমে। সে জন্য তার এত কদর।

গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তখন তারা নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন শুরু করে। শুরু হয় নানামুখী সংকট।

এ বাস্তবতায় অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা কয়েক মাস ধরেই সারা বিশ্বকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এ মন্দার আশঙ্কাতেই গত বছর মার্কিন ডলারের দর বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই সময়ে বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণমূলক নানা পদক্ষেপ মন্দার আশঙ্কা আরও ঘনীভূত করছে।

মার্কিন ডলারের শক্তি এতই যে তার যেকোনো নড়াচড়া বিশ্বের নানা প্রান্তের সব স্তরের মানুষকেই স্পর্শ করে। বিশ্বের বাজারব্যবস্থা যখন অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে, অনিশ্চয়তায় ভোগে, বিনিয়োগকারীরা তখন নিরাপদ একটা আশ্রয় খুঁজতে থাকেন। গত বছর সেই বিনিয়োগমাধ্যম ছিল ডলার। ফেডের নীতি সুদহার বৃদ্ধি তার পালে হাওয়া দিয়েছে। সে কারণেই টাকাসহ বিশ্বের প্রায় সব মুদ্রার বিপরীতে গত বছর ডলারের দর বেড়েছে। রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে ইউএস ডলার ইনডেক্স।

এখন প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের তেজ কমতে শুরু করার অর্থ হলো, উন্নয়নশীল দেশের মুদ্রার বিপরীতেও তা একসময় কমবে। এতে আমদানি ব্যয় কমবে। শক্তিশালী হবে রিজার্ভ। আমদানিনির্ভর দেশগুলো কিছুটা স্বস্তি পাবে।