ইইউতে ১২% শুল্ক বাড়বে পোশাক রপ্তানিতে
আগামী ২০২৯ সালের পর দেশের তৈরি পোশাক খাত ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার হারাবে। এলডিসি উত্তরণ এবং ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) চুক্তির মেয়াদ শেষে ১২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে ইইউতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে। ফলে তৈরি পোশাক খাতের সিংহভাগ রপ্তানির এ গন্তব্যে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের শুল্ক বাড়লেও প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে কোনো ধরনের শুল্ক দিতে হবে না। তাই দ্রুত ইউরোপের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) পক্ষ থেকে আজ সোমবার আয়োজিত এক সেমিনারে এ পরামর্শ দেওয়া হয়। এলডিসি উত্তরণ–পরবর্তী ইউরোপের বাজারে পোশাক খাতের অবস্থা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক মো. দীন ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ইউরোপের বাজারে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হলে প্রতিযোগিতায় টিকতে ৪ শতাংশ পর্যন্ত পোশাকের মূল্য কমাতে হবে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের। বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় কম দামি পোশাক রপ্তানি করায় এই দাম কমানো কঠিন হবে। ইউরোপের বাজারে ট্রাউজার ও টি-শার্টসহ প্রধান ১০টি রপ্তানি পণ্যের দাম চীন ও ভিয়েতনামের পণ্যের চেয়ে ৩৬ শতাংশ কম। এমনকি কম্বোডিয়াও বাংলাদেশের চেয়ে দামি পণ্য রপ্তানি করে থাকে।
মূল প্রবন্ধে আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে বলা হয়, আমদানিনির্ভর হওয়ায় ওভেন পোশাক সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। তাই বাজার সুবিধা নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং দেশীয় কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা তৈরি করতে সংযোগ শিল্প গড়ে তুলতে হবে। নগদ অর্থসহায়তার সুযোগ না থাকলেও লজিস্টিক ব্যয় কমিয়ে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয় প্রবন্ধে।
সেমিনারে অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক তাইবুর রহমান বলেন, পোশাক খাতে সুতার মতো কাঁচামালের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। চামড়া খাতেও দেখা যাচ্ছে নিজস্ব অনেক চামড়া থাকার পরও জুতা বানাতে চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। তাই নিজেদের কাঁচামালের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যবিশেষজ্ঞ মো. মুনির চৌধুরী বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কের চেয়ে অনেক সময় অশুল্ক বাধাও বড় হতে পারে। তাই গবেষণায় ভর্তুকি অব্যাহত রাখা যায়। দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। আর মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে আমাদের দক্ষ নেগোশিয়েটর দরকার। এ জন্য আলাদা উইং করতে হবে, পুল তৈরি করতে হবে।
ইউরোপের বাজারে উন্নত কর্মপরিবেশ একটি ইস্যু হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো বদরুন্নেসা আহমেদ। তিনি বলেন, সামনে আরও ৪ থেকে ৫ বছর সময় আছে, তাই দক্ষতা বৃদ্ধি করে দামি পণ্য তৈরির দিকে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তা মো. মশিউল আলম বলেন, ভবিষ্যতে ২৫ শতাংশের বেশি কার্বন কর আসতে পারে। তাই সেভাবে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
নিট পোশাকে ৭ থেকে ৮ শতাংশ শুল্ক বাড়তে পারে জানিয়ে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের গবেষণা ব্যবস্থাপক হারুনুর রশিদ বলেন, তখন প্রতিযোগিতার কারণে পণ্যের দাম কমাতে হবে। তাই মুদ্রার অবমূল্যায়ন করতে হবে। আর ন্যূনতম ৫০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হবে।