গণশুনানি
ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ন হলে মামলা করার তাগিদ
গণশুনানিতে সাধারণ ভোক্তাসহ বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা অধিকার বৃহৎ পরিসরে ক্ষুণ্ন হলে শুধু জরিমানায় সীমাবদ্ধ না থেকে ফৌজদারি আইনে মামলা করার তাগিদ দিয়েছেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। অপরাধের ধরন অনুসারে ক্ষেত্রবিশেষে দেওয়ানি মামলাও করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মিলনায়তনে গতকাল রোববার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণের প্রত্যাশা বেড়েছে, কিন্তু তাই বলে অতি উৎসাহী হয়ে কিছু করা যাবে না। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইনে তিন ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আমরা দেখি, শুধু জরিমানাই করা হয়। তবে ভোক্তা অধিকার বৃহৎ পরিসরে ক্ষুণ্ন হলে কিংবা বারবার কেউ অপরাধ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা উচিত। অপরাধ বিবেচনায় দেওয়ানি মামলা করারও বিধান আছে।’ সে জন্য শুধু জরিমানা না করে এসব পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতি অনুরোধ জানান তপন কান্তি ঘোষ।
অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা জরিমানা করার এখতিয়ার রাখলেও মামলা করতে মহাপরিচালকের অনুমতির প্রয়োজন; অর্থাৎ মামলা না হওয়ার অর্থ, তাঁরা অনুমতি পাচ্ছেন না। সে জন্য বিষয়টি মহাপরিচালকে দেখার অনুরোধ করেন তপন কান্তি ঘোষ। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের আইনে যে সীমা দেওয়া আছে, তার মধ্যে থেকেই এসব করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পণ্যের দাম ও সেবার বিষয়ে সাধারণ ভোক্তারা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযানের নামে ভোগান্তি না করার অনুরোধ জানানো হয়।
এ সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছি। আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করাই একমাত্র কাজ। আমরা চাই, অভিযানে গিয়ে জরিমানা না করে ফুলের তোড়া দিয়ে ফিরতে।’
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘কোনো অভিযোগ এলে আমরা দুই পক্ষকে নিয়ে কাজ করি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের আগে জানানো হয়। উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। আমরা কাউকে হয়রানি করতে চাই না।’
এ বিষয়ে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণের প্রত্যাশা বেড়েছে, কিন্তু তাই বলে অতি উৎসাহী হয়ে কিছু করা যাবে না। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ফলে এখন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে। এটা আরও আগে করা উচিত ছিল। মনে রাখতে হবে, দিন শেষে এটা মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ।’
ঢালাওভাবে মামলা করা হলে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হয় উল্লেখ করে চিনি ও তেলের মতো পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার সমালোচনা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তবে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে সরকারি নজরদারি থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও সাধারণ ভোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।