কনটেইনার জট, ঢাকার ব্যবসায়ীদের পণ্য পেতে ১৭ দিনের অপেক্ষা  

দুই সপ্তাহ রেলপথে কনটেইনার পরিবহন বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সীমিত আকারে চালু হলেও শিগগিরই সংকট কাটছে না।

ফাইল ছবি

ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপোতে নেওয়ার জন্য গত বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানো হয়েছে ৩০ একক কনটেইনার। স্বাভাবিক গতিতে রেলে পরিবহন করতে গেলে এই কনটেইনারগুলো কমলাপুর ডিপোতে নেওয়ার সুযোগ হবে অন্তত ১৭ দিন পর। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে প্রায় দুই সপ্তাহ রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এই কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে।

রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকার সময় নিয়মিত জাহাজ থেকে কমলাপুরগামী কনটেইনার নামানো হয়। কিন্তু পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর চত্বরে কমলাপুরগামী কনটেইনারের স্তূপ জমে যায়। গত বৃহস্পতিবার বন্দর ইয়ার্ডে কমলাপুরগামী কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫২৫। বন্দরে মোট কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৮২৫ একক। অর্থাৎ বন্দরে এখন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের কাছাকাছি কনটেইনার রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত আকারে ট্রেনে করে কনটেইনার পরিবহন শুরু হয়েছে।

কোটা আন্দোলনের আগে স্বাভাবিক সময়ে (যেমন ১০-১৬ জুলাই) গড়ে ৮৬ একক কনটেইনার বন্দর থেকে রেলপথে কমলাপুর ডিপোতে নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী রেল চলাচল স্বাভাবিক হলেও এই দেড় হাজার একক কনটেইনার পরিবহনে সময় লাগবে ১৭ দিন। অর্থাৎ বন্দরে বৃহস্পতিবার যেসব কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানো হয়েছে, সেগুলো কমলাপুর ডিপোতে পৌঁছাবে ১৭ দিন পর। এরপরই
শুল্কায়ন করে কনটেইনারগুলোর খালাস নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।

■ বন্দরে রয়েছে কমলাপুরগামী আমদানি পণ্যের ১,৫২৫ কনটেইনার।

■ রপ্তানিমুখী পণ্য নিয়ে কমলাপুরে আটকা আছে ৪৩৫ কনটেইনার।

■ স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় গড়ে ৮৬ কনটেইনার নেয় রেল।

জানতে চাইলে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার রেল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি, যাতে প্রয়োজনে বিশেষ পাহারা দিয়ে হলেও কনটেইনার ট্রেন চলাচলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। কারণ, কমলাপুরগামী কনটেইনার রাখার জন্য বন্দরে যে জায়গা আছে, তার চেয়ে কনটেইনারের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। ধারণক্ষমতার বেশি হলে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমেও সমস্যা হয়।’

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হওয়া কনটেইনারের ৩ শতাংশ রেলপথে, ১ শতাংশের কম নৌপথে এবং বাকি ৯৬ শতাংশ সড়কপথে আনা-নেওয়া হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেলপথে আমদানি-রপ্তানি ও খালি অবস্থায় আনা-নেওয়া হয়েছে মোট ৮৮ হাজার একক কনটেইনার।

রেলপথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর ডিপোতে নেওয়া পণ্যের তালিকায় রয়েছে ইস্পাত পণ্যসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও বাণিজ্যিক পণ্য। ডিপোতে নেওয়ার পর সেখানে শুল্কায়ন করে কাস্টম। এরপরই খালাস নেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে বন্দরে জমে থাকা দেড় হাজার একক কনটেইনারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ইস্পাত পণ্যের। জানতে চাইলে আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আমীর হোসেন নুর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেল যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার এক দিন আগে আমার ২৫ কনটেইনার পণ্য রেলে ওঠানোর কথা ছিল। কিন্তু গত ১৫ দিনেও তা কমলাপুরে আনতে পারেনি রেলওয়ে। নতুন করে যেসব চালান বন্দরে জাহাজ থেকে নামানো হবে, সেগুলো ২০ দিনের আগে হাতে পাওয়া সম্ভব হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ইস্পাতের পাত হাতে না পাওয়ায় অনেক ছোট কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে আছে। আবার পণ্য হাতে না পাওয়ায় নগদ অর্থের সংকটে নতুন করে ঋণপত্র খোলাও যাচ্ছে না।

চট্টগ্রামে যেমন আমদানি পণ্যের কনটেইনার আটকা পড়েছে, তেমনি ঢাকার কমলাপুর ডিপোতেও আটকে আছে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার। বৃহস্পতিবার রপ্তানি পণ্য নিয়ে ৪৩৫ একক কনটেইনার আটকা ছিল ডিপোতে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্য রপ্তানির তিনটি কনটেইনারের চালান ছিল এসিআই লিমিটেডের।

এসিআই লিমিটেডের পক্ষে পণ্য খালাসকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারগুলো আটকে ছিল। বৃহস্পতিবার রেল যোগাযোগ চালু হলেও চট্টগ্রামে রপ্তানি কনটেইনার পাঠানো যায়নি। ক্রমতালিকা অনুযায়ী কখন পাঠানো যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।

কমলাপুর ডিপোতে আমদানিকারক-রপ্তানিকারকের পক্ষে পণ্য খালাসে কিংবা রপ্তানিতে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম প্রথম আলোকে বলেন, এখন যে অবস্থা, তাতে স্বাভাবিক গতিতে কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল করলেও জট কমবে না। এ জন্য ট্রেনসংখ্যা বাড়িয়ে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রায় দুই সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার কনটেইনার পরিবহন শুরু হলেও ট্রেনের সংখ্যা ছিল কম। প্রথম দিনে মাত্র একটি ট্রেন কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যায়। স্বাভাবিক সময়ে অন্তত তিনটি ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে কনটেইনার নেওয়া হয়। অন্যদিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছে দুটি ট্রেন। একটি ট্রেনে ২৪-৩০ একক কনটেইনার পরিবহন হয়।

জট নিরসনে রেল কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, জানতে চাইলে চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের স্টেশনমাস্টার আবদুল মালেক বলেন, বৃহস্পতিবার তিনটি ট্রেনে কনটেইনার আনা-নেওয়া শুরু হয়েছে। রেল যোগাযোগ বন্ধের আগে এসব কনটেইনার আটকা পড়েছিল। এখন প্রতিদিন ট্রেন চলবে। জট কমাতে ট্রেনসংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।