দুই টুকরা হচ্ছে পিআইএ, বিক্রি হবে পাকিস্তানের এই বিমান সংস্থা

পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ)ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের জাতীয় বিমান সংস্থাকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ) লোকসান দেওয়া অব্যাহত রাখায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশটির নির্বাচন কমিশন সরকারকে কোনো চূড়ান্ত চুক্তি করতে নিষেধ করার কয়েক দিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত এল।

রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তানের এই বিমান সংস্থাকে বাজারে বিক্রি করতে মন্ত্রিসভার অনুমোদন জরুরি ছিল। তবে নির্বাচন কমিশন বলেছে যে বিষয়টি পর্যালোচনা না করা পর্যন্ত পিআইএ বিক্রি করার পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হবে।

গত সপ্তাহে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছিল যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাকিস্তানের জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ কোম্পানিটি বিক্রির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে পিআইএর জন্য বিনিয়োগ পাওয়া যাবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং লোকসানে জর্জরিত বিমান সংস্থাটির আর্থিক পুনর্গঠনের একটি পরিকল্পনার কাজ শেষ করেছে।

নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিয়েছে, বিবৃতিতে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার উল হক কাকার এর আগে বলেছিলেন যে পরবর্তী সরকার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।

নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের হাতে বেসরকারীকরণের এই কার্যক্রম ছেড়ে দেওয়ায় বোঝা যাচ্ছে নতুন প্রশাসনকে কতটা মারাত্মক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই কঠিন। পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নেওয়ার কারণে। দেশটির ২৪ কোটি মানুষ কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

পাকিস্তানের বেসরকারীকরণ কমিশন এর আগে পিআইএ-কে বিক্রি করার প্রস্তাব তৈরি করে। মন্ত্রিসভা সেই প্রস্তাবই অনুমোদন করেছে। দেশটির রাষ্ট্রমালিকানাধীন অনেক প্রতিষ্ঠানই লোকসান দিচ্ছে। বেসরকারীকরণ কমিশন সেসব প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে।

পিআইএ পুনর্গঠনের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে এই সংস্থাকে দুই ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর মধ্যে একটি অংশ হবে ‘ক্লিন’ বা পরিশুদ্ধ, যা বিক্রির জন্য বাজারে তোলা হবে। অন্য অংশটি হবে একটি হোল্ডিং কোম্পানি, যার আওতায় থাকবে সব ধরনের ঋণ। এই ঋণের মধ্যে রয়েছে ঋণাত্মক হয়ে পড়া ২৯৫ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি রুপির ইকুইটি ঋণ, ঋণদাতাদের অর্থ ও লোকসানি অর্থ।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনুমোদিত পরিকল্পনার আওতায় পিআইএ-কে দুটো কোম্পানিতে ভাগ করা হবে, যেগুলো পরিচিত হবে ‘টপকো’ এবং ‘হোল্ডকো’ নামে। পিআইএর মূল কার্যক্রম, গ্রাউন্ড ব্যবস্থাপনা, কার্গো, ফ্লাইট কিচেন এবং প্রশিক্ষণ টপকোর অংশ হবে। আর হোল্ডকোর আওতায় থাকবে প্রকৌশল স্থাপনা, পিআইএ ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং অন্যান্য বিভাগ ও সম্পদ।

গত জুনে আইএমএফের সঙ্গে ৩০০ ডলারের ঋণচুক্তিতে পৌঁছায় পাকিস্তান। এর আওতায় রাষ্ট্রীয় খাতের প্রতিষ্ঠান সংস্কার করার অঙ্গীকার করে ইসলামাবাদ। তখনকার সরকার পিআইএ-কে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়। আইএমএফের শর্ত পরিপালনে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতা দিয়েছিল বিদায়ী পার্লামেন্ট।

পিআইএর ২৮০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ৭৮ হাজার ৫০০ কোটি রুপির দায় রয়েছে। গত জুন মাসে তাদের লোকসানের মোট পরিমাণ ছিল ২৫৫ কোটি ডলার বা ৭১ হাজার ৩০০ কোটি রুপি।

আইএমএফের কাছে নতুন সরকার যদি আবার ফেরত যেতে চায়, তাহলে বেসরকারীকরণে কতটা অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, তা দেখাতে হবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য দেওয়া বর্তমান ঋণ মার্চে শেষ হবে এবং নতুন সরকারকে আবার আইএমএফের কাছে যেতে হতে পারে।