মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় মজুরি নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, সরকার বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় রেখেই তৈরি পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সমন্বয়ের চেষ্টা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে মজুরি বৃদ্ধি করে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার কথা বলেছেন। এতে মালিকদের কষ্ট হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা মেনে নিয়েছেন।

আজ বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈচিত্র্যপূর্ণ উদ্ভাবনী ডেনিম পণ্য প্রদর্শনের লক্ষ্যে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এই ডেনিম এক্সপো চলবে কাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

ডেনিম এক্সপোর এবারের আসরে বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ভিয়েতনাম, জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডসহ ১২টি দেশের ৮০টির বেশি কোম্পানি অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত ও উৎপাদিত বস্ত্র, পোশাক, সুতা, যন্ত্র, ফিনিশিং সরঞ্জাম ও উপকরণ প্রদর্শন করছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘শ্রমিকদের সুবিধার বিষয়ে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের পরিবার কার্ড দেওয়ার কথা বলেছেন। এতে তাঁরা সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার কিনতে পারবেন। মজুরি নিয়ে মালিকদের প্রাথমিক প্রস্তাব আরও কম ছিল কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে তাঁরা ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি মেনে নিয়েছেন। তারপরও কেউ কেউ সমস্যা করার চেষ্টা করছে।

বক্তব্য দিচ্ছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান

মজুরি ঘোষণার পরও কেন আন্দোলন চলছে, তা নিয়ে অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, মালিকপক্ষের প্রস্তাব ছিল ১০ হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে এবং মানবিক বিবেচনায় মালিকেরা ১২ হাজার ৫০০ টাকার প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন। এটা মালিকপক্ষের জন্য কঠিন, কিন্তু মজুরি ঘোষণার পরও কেন আন্দোলন চলছে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এভাবে চললে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের উচিত হবে, কারও উসকানির ফাঁদে পা না দিয়ে কারখানা রক্ষা করা, কাজে ফিরে যাওয়া।

বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, গতকাল ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে, এটা বাস্তবায়ন মালিকপক্ষের অগ্রাধিকার। তাঁর আশা, ক্রেতারাও এ বিষয়ে সহযোগিতা করবে।

ডেনিম এক্সপো নিয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘বৈশ্বিক ডেনিম খাতে এই এক্সপো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত বছরে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করছে, ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে চাই আমরা। সে জন্য এই খাতে পণ্য বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই।’

এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার আঞ্চলিক প্রধান জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমাদের পণ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস বাংলাদেশ। আমরা যে দেশেই কার্যক্রম পরিচালনা করি, সেখানকার স্থানীয় নিয়ম মেনে চলি। বাংলাদেশে নতুন মজুরি কাঠামোতে চূড়ান্তভাবে ন্যূনতম যে মজুরি নির্ধারণ করা হবে, সে অনুযায়ী আমরা মূল্য পরিশোধে রাজি আছি।’

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল মান্নান ও বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বক্তব্য দেন।

আয়োজকেরা জানান, ডেনিম জগতে আন্তর্জাতিকভাবে শীর্ষস্থানীয় প্রদর্শনীগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো অন্যতম। ইতিমধ্যে এটি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে, বিশেষ করে ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় ডেনিম সোর্সিং প্ল্যাটফর্মের খ্যাতি পেয়েছে।