বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। পৌরসভাটিতে ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ২৫ বছরে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ২১ টাকা ১১ পয়সা হিসাবে সরকার ৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তা জানান।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) তাজুল ইসলাম গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকায় দৈনিক প্রায় ১৭ হাজার ৫৪ টন কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এ বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করতে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে (সব বর্জ্য যেখানে জমা করা হয়) দেশে প্রথমবারের মতো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প নেওয়া হয়। তুরাগ নদের কাছাকাছি আমিনবাজার এলাকায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ কারখানা স্থাপনের কাজ এখন চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি)। তিন বছর আগে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির এক বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
তখন জানানো হয়েছিল, ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে প্রায় ১৮ দশমিক ৩০ টাকা। চীনা কোম্পানি এই প্ল্যান্ট স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। তারাই উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি করবে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে। সিটি করপোরেশন দেবে প্রয়োজনীয় জমি। নিয়মিত বর্জ্য সরবরাহও করবে সিটি করপোরেশন। এ জন্য প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য লাগবে।
এ ব্যাপারে সিএমইসির সঙ্গে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিউবোর একটি চুক্তি হয়। তখন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, দেশের সব জেলায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে নির্বাচন করা হয়েছে একটি কোম্পানি। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে ৮১ একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সংসদকে জানান নসরুল হামিদ।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎকেন্দ্র শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে না। কারণ, কাজ পাওয়া কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের লোকসান হবে। গাজীপুরেও এ ধরনের একটি কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল। পরে সরকারের কাছে কিছু জাল-জালিয়াতি ধরা পড়ায় এটিও হচ্ছে না। ডিএসসিসিরটাও আলোর মুখ দেখার বাস্তবতা কম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ছাড়া এখন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে শুধু ডিএনসিসিটিতে।
ডিএনসিসি পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা ছাড়াই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প নেয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের মতে, প্রকল্পটি অত্যন্ত জটিল এবং দেশে বর্জ্যের দাহ্য হওয়ার ক্ষমতা বা ক্যালরিফিক ভ্যালু খুবই কম হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও বেশি পড়বে।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০১৩ সালে ইতালির একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। এটি আলোর মুখ দেখেনি। এটি কেন বাস্তবায়িত হলো না, তার কোনো মূল্যায়নও হয়নি।
যোগাযোগ করলে বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিএমইসি এখন থেকে দেড় বছর পর বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে বলে আশা করছি।’
এদিকে বিউবোর আরেক প্রস্তাবে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ট্যারিফ অনুমোদন করেছে ক্রয় কমিটি। এ কেন্দ্র থেকে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কেনা হবে। এ জন্য প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১১ টাকার একটু বেশি হিসাবে মোট ৩ হাজার ৫৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করবে সরকার।