পণ্যের সরবরাহ কমালে বাজারে নয়, অভিযান হবে মিলে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি: প্রথম আলো

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেছেন, পুলিশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। তাই কোনো মিল থেকে যদি পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেই মিলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরবরাহ–সংকটের কারণে বাজারে অভিযান হবে না। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কোনো বাজারে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাখবে।

আজ বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা ও সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা বক্তব্য দেন।

আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তা নিয়ে অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজার ভালো করতে হলে যারা পণ্যের সরবরাহ দেয়, ব্যবসা করে এবং যারা ভোক্তা তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের মধ্যে সমন্বয় দরকার। তিনি বলেন, ‘কোনো মিল যদি পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে দেয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে অভিযান করা হবে। আমদানিকারক বা ব্যবসায়ী যত বড় হোক না কেন, অনিয়ম হলে ছাড় দেওয়া হবে না। সরবরাহের সংকটের কারণে বাজারের দোকানে কোনো অভিযান করা হবে না।’

আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সবখানে বলেছি, এখানেও বলছি পুলিশ দিয়ে অভিযান করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তবে আমদানিকারক বা ব্যবসায়ী অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রমজানসহ পুরো বছরই বাজারের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা হবে।’

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য আমি এখানে আসিনি। এখানে এসেছি বাজারে যাতে পণ্যের সরবরাহ ঠিক থাকে, সে বিষয়ে কথা বলতে। পণ্যের সরবরাহ যদি ঠিক থাকে, তাহলে দাম এমনিতেই ঠিক থাকবে।’
আহসানুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আবেগপ্রবণ। রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা খেজুর দিয়ে ইফতার করতে চান। সাধারণ মানুষ অতি উচ্চ মূল্যের খেজুর খান না। তাঁরা সাধ্যের মধ্যে কিনতে চান। বন্দর দিয়ে আসা ১৪০ টাকা কেজির খেজুর যেন ৩৪০ টাকা না হয়। সরকার খেজুরের আমদানি শুল্ক যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা ৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. সোলাইমান সেলিম বলেন, এখানে যাঁরা ব্যবসায়ী আছেন, তাঁরা অতীতে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। আগামী দিনেও তাঁরা এ কাজ করবেন। তবে ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হতে হবে। পুরান ঢাকার মানুষের সুনাম আছে। সেই সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সৎভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বসির উদ্দিন বলেন, ‘মৌলভীবাজারের কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আমাদের জানাবেন। অভিযান করতে হলে আমাদের সঙ্গে নেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে শুধু জরিমানা না, প্রয়োজনে জেলে দেন। দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। যেন অন্য কেউ অনিয়ম করতে গেলে ভয় পায়। তবে অযথা ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা যাবে না। ব্যবসায়ীরা এমনিতেই নানামুখী চাপে আছে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, নতুন সরকার গঠনের পরে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হচ্ছে। বাজারে বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের পেছনে দৌড়ানো আমাদের কাজ নয়। বাজার স্থিতিশীল থাকলে আমাদের কাজও কমে যায়। সামনে রমজান আসছে, এই সময়ে ভোক্তা সাধারণ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা নষ্ট করে দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। জুন মাসে বাজেট দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামে পরিবর্তন এলে বা অন্য কোনো কারণে শুল্ক-করে সমন্বয়ের প্রয়োজন দেখা দিলে তা করতে গড়িমসি করা হয়।

এই ব্যবসায়ী বলেন, বাজেট হয়ে গেলে শুল্ক-করকে পবিত্র বাণী হিসেবে দেখা হয়। তাতে আর পরিবর্তন করার কোনো মানসিকতা থাকে না। এ ধরনের মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে অসাধু আখ্যা দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এবং তাজা ফল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খেজুরের দাম নিয়ে কথা বলেন। তাঁর মতে, খেজুরের শুল্ক-কর যেটুকু কমানো হয়েছে, তা মোটামুটি ঠিক ছিল। কিন্তু কাস্টমস থেকে মূল্যায়ন বা এসেসমেন্ট ভ্যালু বাড়িয়ে ধরা হচ্ছে, ফলে খুচরা বাজারে দামের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে না।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ী যাঁরা আমাদের কাছ থেকে খেজুর নিয়ে গেছেন, তাঁরা বলছেন বিক্রি কম হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ার কারণে মানুষ খেজুর কম কিনলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।’

পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মফিজুল হক জানান, তাঁদের চিনি এখনো বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে এবং রমজানে চিনির দাম আরও বাড়বে কি না, তা তাঁরা এখনো জানেন না। তিনি বলেন, কয়েকটি কারখানা চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তারা যেভাবে দাম দেয় সেটাই মেনে নিতে হয়। এ জন্য পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

মতবিনিময় সভায় ৪০টির বেশি ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।