মোবাইল অপারেটরদের ১০০ টাকা আয়ের ৫৪ টাকাই সরকার পায়: অ্যামটব
বাংলাদেশে মুঠোফোন সেবার ওপর করহার বেশি। মোবাইল অপারেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০০ টাকা আয় করলে তার ৫৪ টাকাই সরকার পায় বিভিন্ন ধরনের কর ও ফি বাবদ।
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) ও টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অপারেটরদের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।
আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য টেলিযোগাযোগ খাতের করনীতি বিষয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে টেলিযোগাযোগ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি ও করনীতি তুলে ধরেন অ্যামটবের মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার। তিনি বলেন, দেশে এখন ১৯ কোটির বেশি মুঠোফোন গ্রাহক রয়েছেন। মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটির বেশি। তাঁরা মাসে গড়ে সাড়ে ৬ গিগাবিট (জিবি) ডেটা ব্যবহার করেন।
মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর আরোপ করা করহার অনেক বেশি। কর ও ফি বেশি না হলে টেলিযোগাযোগ সেবার ব্যবহার আরও বাড়ত। তা দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বাড়াতে বেশি ভূমিকা রাখত।
বৈঠকে অ্যামটবের উপস্থাপনায় দেখানো হয়, অপারেটদের প্রতি ১০০ টাকা আয়ের ৩৯ টাকা বিভিন্ন কর বাবদ নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। লাইসেন্স, তরঙ্গসহ বিভিন্ন ফি বাবদ ১৫ টাকা নেয় বিটিআরসি। ১৮ টাকা পায় টাওয়ার কোম্পানিসহ বিভিন্ন বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, যারা টেলিযোগাযোগ খাতে সেবা দেয়। ২৬ টাকা রাখতে পারে অপারেটর।
সরকার টেলিযোগাযোগ খাত থেকে কর ও ফি বাবদ যে হারে অর্থ নেয়, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয় অ্যামটবের উপস্থাপনায়। সেখানে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় হার ২২ শতাংশ। বাংলাদেশে যা দ্বিগুণের বেশি।
মুনাফা হোক, লোকসান হোক, অপারেটরদের মোট আয়ের ওপর ২ শতাংশ লেনদেন কর দিতে হয় বলে উল্লেখ করে অ্যামটব বলেছে, তামাক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে হারটি ৩ শতাংশ। তামাক ব্যবসা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাদের মতো মোবাইল অপারেটরদের ওপর উচ্চহারে লেনদেন কর আরোপ অযৌক্তিক।
সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশ—১১টি দেশের করপোরেট করহারের চিত্র তুলে ধরে অ্যামটব আরও বলেছে, বাংলাদেশেই টেলিযোগাযোগ খাতে করপোরেট কর সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ কোম্পানির ক্ষেত্রে হারটি ৪০ শতাংশ। অন্যদের ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ।
টেলিযোগাযোগ খাতে কর বছর বছর কতটা বেড়েছে, তা-ও তুলে ধরা হয় অ্যামটবের উপস্থাপনায়। বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গ্রাহক ১০০ টাকা মুঠোফোনে রিচার্জ করলে তা থেকে কর কাটা যেত ২১ টাকা ৭৫ পয়সা। এখন যায় ৩৩ টাকার কিছু বেশি।
গোলটেবিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, এনবিআরকে কর আদায়ের নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে গেলে স্মার্ট করনীতি প্রয়োজন, নয়তো প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরই তিনি অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরের কাছে মোবাইল অপারেটরদের সুপারিশগুলো তুলে ধরবেন।
অ্যামটব সভাপতি ও গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, অপারেটররা কর দিয়েই ব্যবসা করতে চায়। তবে টেলিযোগাযোগ খাতে করপোরেট করহার তামাক কোম্পানির মতো বেশি হওয়া উচিত নয়। তিনি করকাঠামো পর্যালোচনার আহ্বান জানান।
টেলিযোগাযোগ খাতের করনীতি পর্যালোচনা করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির অনুষ্ঠানে সরকারের করনীতিকে সহজ ও স্মার্ট করার আহ্বান জানান।
টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশনস স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, অ্যামটবের সাবেক মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির, গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত, রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাইমুর রহমান প্রমুখ।