বগুড়ার মোকাম সবজিতে ভরপুর, দামও চড়া

করলার দাম বেশ চড়া। পাইকারীতে প্রতি কেজি করলা ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থান মোকামে
ছবি: সোয়েল রানা

শীত বিদায় নিলেও বগুড়ার বাজার এখনো সবজিতে ভরপুর। খেত থেকে বাজার—সবখানেই যেন সবজি আর সবজি। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে।

সবজির দাম বেশি কেন, এ প্রশ্নের জবাবে আড়তদারদের একজন একেক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, আলুর দাম বাড়ায় অন্য সবজিতে তার প্রভাব পড়েছে। কেউ দাবি করছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম। আবার কারও কারও বক্তব্য, শীতকালীন সবজি শেষের দিকে। গ্রীষ্মকালীন সবজি খেত থেকে উঠতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। যদিও বাজারে সবজির অভাব নেই। দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। তত দিনে শীতকালীন সবজির সরবরাহ আরও কমে আসবে। তখন দাম আরও বাড়বে।

আজ শুক্রবার সকালে দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজির পাইকারি মোকাম বগুড়ার মহাস্থান হাট ঘুরে দেখা যায়, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, শসা, গাজর, করলা, পটোল, টমেটো, পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, কাঁচা মরিচ, আলুসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির কোনো কমতি নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা, আড়তদার ও পাইকারদের হাঁকডাকে সরগরম সবজির হাট। কৃষকের এক হাত ঘুরে কিছু সবজি যাচ্ছে স্থানীয় খুচরা বাজারে। বেশির ভাগ সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় মোকামে।

মোকামে আসা কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানালেন, প্রতি কেজি দেশি পাকড়ি আলু বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়, ডায়মন্ড আলু ১২, কাঁচা মরিচ ১৩০, গাজর ১৫, করলা ৭০, মুলা ৩০, বেগুন ২০, টমেটো ২৫, শসা ১৭, পটোল ৫০, পেঁপে ২০ টাকা, ফুলকপি ১৫ আর প্রতি পিস মাঝারি আকারের বাঁধাকপি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অথচ এক সপ্তাহ আগেও মহাস্থান হাটে প্রতি কেজি দেশি পাকড়ি আলু বিক্রি হয়েছে ১৬ টাকায়, ডায়মন্ড আলু ৯ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০, গাজর ১৩, মুলা ২০, টমেটো ২০, শসা ১০, পেঁপে ১০ টাকা, ফুলকপি ৩ টাকা এবং মাঝারি আকারের প্রতি পিস বাঁধাকপি ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শসা, কাঁচা মরিচ, ফুলকপি, লেবু ও পেঁপের দাম।

মহাস্থান হাটে ১০ মণ পাকড়ি আলু বিক্রি করতে এসেছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলার জামুরহাটের কৃষক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে হাটে আলু বিক্রি করে দাম পেয়েছি প্রতি মণ ৬৫০ টাকা। আজ প্রতি মণে ১০০ টাকা বেশি পেয়েছি।’
সদর উপজেলার পীরগাছা গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘গত সপ্তাহে এক মণ শসা বেচনো ৪০০ টেকা দরে। আজ বেচ্চি ৭০০ টেকা মণ দরে। রোজা আসলে দাম আরু উঠপি।’

বগুড়ার পাইকারি বাজারে যখন এ দাম, তখন রাজধানীতে কী অবস্থা। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে করলা, পটোল, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, ধুন্দুল ও ঝিঙে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার বেশি দামে। শীতের সবজির মধ্যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২৫ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদপুর কৃষি বাজার ও টাউন হল বাজারে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ছিল ৬০ থেকে ১০০ টাকা। আর শিম বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।

মহাস্থান হাটের আড়তদার ও কাঁচা-পাকা মাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, শীত মৌসুমে মহাস্থান হাটে গড়ে ১০০ ট্রাক সবজি বেচাবিক্রি হয়। এ বছর শীত শেষ হলেও বাজারে সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। এখনো প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক সবজি পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন পাইকারি মোকামে।

মোকামে মিষ্টি লাউ প্রচুর। দামও চড়া । পাইকারীতে প্রতিমণ মিষ্টি লাউ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে । বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থান মোকামে
ছবি: সোয়েল রানা

শফিকুল ইসলাম বললেন, গত বছর মার্চে হাটে সবজির আমদানি প্রায় শূন্যে নেমে এসেছিল। এ বছর এখনো বাজারে প্রচুর সবজি আসছে। তবে হিমাগারে সংরক্ষণ মৌসুম শুরু হওয়ায় হঠাৎ আলুর দাম বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে অন্য সবজিতে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে।

শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন আড়তদার বাজারে সবজির আমদানি কমে যাওয়ার দাবি করলেও, বাজার ঘুরে এর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং বাজারে সবজির আধিক্যই দেখা গেছে। তার বাইরে অবশ্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য আছে। তাঁদের কারণে দাম আরও বেড়ে যায়।