এবারও রোজার আগে বাড়তে শুরু করেছে ব্রয়লার মুরগির দাম

ফাইল ছবি

পবিত্র রমজানের আগে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে। গত রমজানের আগে রেকর্ড দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল। সে সময়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২২৫ থেকে ২৩৫ টাকা। একপর্যায়ে তা আড়াই শ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এখন ব্রয়লারের দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২১০ টাকা। কোথাও কোথাও ২২০ টাকা কেজিতেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় দাম এখনো খানিকটা কম থাকলেও গত এক সপ্তাহে ব্রয়লারের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাস দেড় আগে প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা বিক্রি হয়েছে কমবেশি ৭০ টাকায়। সাধারণত ব্রয়লারের বাচ্চার দাম থাকে ৩০ টাকার মতো। অতিরিক্ত এ দামের কারণে তখন খামারিরা খামারে নতুন করে বাচ্চা তোলা কমিয়ে দিয়েছিলেন। সে কারণেই এখন বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। ফলে দাম বাড়ছে। মুরগি ব্যবসায়ীরা মনে করেন, গতবারের মতো এবারও যাতে রোজা ও শবে বরাতের আগে বাজারে অস্থিরতা তৈরি না হয়, সে জন্য কর্তৃপক্ষের তদারক করা প্রয়োজন।

প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখন-তখন মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাংস ও ডিমের দাম বাড়লে মানুষ কথা বলে, হইচই হয়। কিন্তু ৩০ টাকার মুরগির বাচ্চা ৮০ টাকায় বিক্রি করলে তখন কেউ কথা বলে না। অথচ সবার প্রত্যাশা থাকে কম দামে ডিম-মুরগি খাওয়ার। খামারির খরচ যে বাড়ল, তা দেখার কেউ নেই। মুরগি ও ডিমের বাজারে অস্থিরতা কমাতে হলে মুরগির খাদ্য ও বাচ্চার দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে।’

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লেও স্থিতিশীল আছে সোনালি মুরগি দাম। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজারে সাধারণত ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লে সোনালি মুরগির দামও কিছুটা বাড়ে। তবে এখন মূলত ব্রয়লার মুরগির দামই বাড়ছে। কারণ, ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার সংকট বেশি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

চড়া দামে মুরগির বাচ্চা কিনতে হচ্ছে উল্লেখ করে নরসিংদীর খামারি রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই হাজার বাচ্চা চাইলে এক হাজার পাওয়া যাচ্ছে। তা–ও আবার কোম্পানিগুলোর নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সময়ভেদে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম কখনো কখনো ৭০ থেকে ৭৫ টাকাও পড়ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। আবার অনেকে বাচ্চা না পেয়ে খামার বন্ধ রাখছে।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ফার্মের মুরগির উৎপাদন হয়েছিল ৩১ কোটি ৯৭ লাখ। সরকারের হিসাবে গত ১০ অর্থবছরে মুরগির উৎপাদন ক্রমেই বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়ার আগপর্যন্ত দেশের বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম মোটামুটি ১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। এর পর থেকে মুরগির বাজার ওঠানামার মধ্যে আছে। কখনো খামারিরা লোকসান করছেন, আবার কখনো ক্রেতাদের বেশি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে।

গত বছর রোজার ঠিক আগে দাম বেশি বেড়ে যাওয়ার পর মুরগি উৎপাদনকারী বড় চার প্রতিষ্ঠানকে ডেকে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তখন বাজারে মুরগির দাম কমেছিল বলে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।