রপ্তানি খরচ বাড়ছে ৭৬ কোটি টাকা

জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে তিন ধাপে সেবা মাশুল বাড়িয়েছে কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন।

ফাইল ছবি

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে এবার রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার খরচও বেড়েছে। প্রতি কনটেইনার রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এখন ২৫ শতাংশ বাড়তি মাশুল দিতে হবে। তাতে বছরে ন্যূনতম ৭৬ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে রপ্তানি খাতে।

গতকাল রোববার ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মাশুল বাড়ানোর এই ঘোষণা দেন কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। ঢাকায় বাফার কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে এই বৈঠক হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া কনটেইনার পণ্যের ৯০ শতাংশ বেসরকারি ডিপোর মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা হয়। এ হিসাবে বাড়তি মাশুল দিতে হবে ৯০ শতাংশ রপ্তানি পণ্যে। মূলত বিদেশি ক্রেতারাই এই মাশুল দেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী, রপ্তানিকারকেরাও এই মাশুল পরিশোধ করেন।

মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মাশুল পরিশোধের দায়িত্ব বিদেশি ক্রেতা বা রপ্তানিকারক যার কাঁধেই পড়ুক, দিন শেষে রপ্তানি খাতের ওপর প্রভাব পড়বে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে মাশুল বাড়বে, এটা ঠিক। তবে তা ডিপোর নীতিমালা অনুযায়ী কমিটি নির্ধারণ করার কথা। নিয়ম না মেনে অযৌক্তিকভাবে এই মাশুল বাড়ানো হয়েছে।

চট্টগ্রামে ২০টি অনুমোদিত বেসরকারি কনটেইনার ডিপো রয়েছে। সারা দেশের কারখানাগুলো থেকে রপ্তানি পণ্য এসব ডিপোতে এনে কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। আবার বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ৩৮ ধরনের কনটেইনার-ভর্তি পণ্য এসব ডিপোতে এনে খালাস করা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া ডিপোগুলো খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ করে।

মাশুল বাড়ছে ২৫ শতাংশ

৬ আগস্ট শুক্রবার সরকার চার ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়। বেসরকারি ডিপোগুলোতে কনটেইনার ওঠানো–নামানো ও পরিবহনের কাজে ডিজেলচালিত যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয়। তাই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে তাদের মাশুলও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গতকালের বৈঠকে কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরূল কাইয়ূম খান ৪২ দশশিক ৫০ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। বাফার সভাপতি কবির আহমেদ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যৌক্তিক বলে জানান। দুই পক্ষের আলোচনা শেষে ২৫ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে সমঝোতা হয়।

বৈঠকে কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এ জে রিজভী ও সভাপতি খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বাফার পক্ষে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী ও সহসভাপতি খায়রুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরূল কাইয়ূম খান বলেন, বর্ধিত মাশুল জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর দিন থেকে কার্যকর হবে। তেলের দাম বাড়ায় ডিপো পরিচালনার খরচ অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় মাশুলের হার বাড়ানো হয়নি। ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলের দাম কমলে মাশুলও কমানো হবে।

বাফার সভাপতি কবির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মাশুলের বড় অংশই বিদেশি ক্রেতাদের পক্ষে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা পরিশোধ করবে। এ কারণে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের চুক্তি পর্যালোচনা করতে হবে। বিদেশি ক্রেতাদের আমরা বিষয়টি জানিয়ে দেব।’

বছরে খরচ বাড়বে ৭৬ কোটি টাকা

বর্তমানে রপ্তানি পণ্যবাহী ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারের ‘স্টাফিং চার্জ’ ৫ হাজার ৯২ টাকা। এই মাশুল কনটেইনারপ্রতি ১ হাজার ২৭৩ টাকা বেড়ে দাঁড়াবে ৬ হাজার ৩৬৫ টাকা। কনটেইনার ৪০ ফুট লম্বা হলে মাশুল ১ হাজার ৬৯৭ টাকা বেড়ে দাঁড়াবে ৮ হাজার ৪৮৭ টাকা।

স্টাফিং চার্জের মধ্যে রয়েছে কনটেইনার ডিপোতে খালি কনটেইনার শেডের সামনে এনে রপ্তানি পণ্য বোঝাই করা এবং গাড়িতে করে
ডিপো থেকে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম।

গত বছর সাত লাখ একক কনটেইনার পণ্য রপ্তানি হয় ডিপো থেকে। রপ্তানি হওয়া কনটেইনারের ৮৫ শতাংশই ছিল ৪০ ফুট লম্বা। সেই হিসাবে বছরে ‘স্টাফিং চার্জ’ বাবদ বছরে বাড়তি ব্যয় হবে ৬৫ কোটি টাকা।

রপ্তানিতে স্টাফিং ছাড়াও ভিজিএম মাশুল বা ওজন পরিমাপের মাশুলও ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ভিজিএম মাশুল ১ হাজার ৪১৫ টাকা। কনটেইনারপ্রতি এই খাতে বাড়তি খরচ ২৮৩ টাকা। বছর শেষে বাড়তি ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা। এ দুই মাশুল মিলিয়ে বছরে বাড়তি খরচ হবে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা।

বেড়েছে অন্যান্য মাশুলও

জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার এবং খালি কনটেইনারের মাশুল বাড়িয়েছে কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন। ১০ আগস্ট আমদানি পণ্য ব্যবস্থাপনার মাশুল প্রায় ৩৪ শতাংশ বাড়ানো হয়। বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ৩৮ ধরনের পণ্য যেগুলো ডিপোতে নিয়ে খালাস হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে এই বাড়তি মাশুল গুনতে হবে। এর পরিমাণ বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া কনটেইনারের ২১ শতাংশ। এ ছাড়া ১৭ আগস্ট খালি কনটেইনার সংরক্ষণের মাশুল ২৪ শতাংশ বাড়ানো হয়। খালি কনটেইনারের মাশুল পরিশোধ করবে বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলো।