তামাক পণ্যের দাম বাড়িয়ে ১০,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করা সম্ভব

কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে তামাক পণ্যের দাম বাড়ালে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়বে। বর্ধিত এই রাজস্ব চলমান আর্থিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ৫ লাখ তরুণসহ ১১ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

রাজধানীর বিএমএ ভবনে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত ‘তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলা হয়েছে। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) যৌথভাবে কর্মশালাটির আয়োজন করে।

কর্মশালায় প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের ও তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক প্রকল্পের প্রধান হাসান শাহরিয়ার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. আবদুস সালাম, যোগাযোগ ব্যবস্থাপক হুমায়রা সুলতানা, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের (আত্মা) আহ্বায়ক লিটন হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

প্রজ্ঞা বলেছে, তামাকের দাম বেশি হলে তরুণ জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত হয় এবং বর্তমান ব্যবহারকারীরাও বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ছাড়তে উৎসাহিত হয়।

কর্মশালায় আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাক পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিশেষ করে নিম্নস্তরের সিগারেটের করহার ও দাম বাড়িয়ে এটাকে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে সব ধরনের তামাক পণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং নিত্যপণ্যের তুলনায় এগুলো আরও সস্তা হয়ে পড়ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে প্রজ্ঞা দেখেছে, ২০২১ সালের ৪ জুলাইয়ের তুলনায় ২০২৩ সালের ৪ জুলাইয়ে খোলা চিনির দাম ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙাশ মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ ও ব্রয়লার মুরগির দাম ২৭ শতাংশ বেড়েছে। অথচ একই সময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।

কর্মশালায় জানানো হয়, নিম্নস্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ালে তা স্বল্প আয়ের লোকদের ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করবে। বর্তমানে সিগারেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ৭৫ শতাংশই কম দামি সিগারেটের ভোক্তা এবং এ স্তরে সম্পূরক শুল্কের হার মাত্র ৫৮ শতাংশ।

আগামী বাজেটে তামাক পণ্যের ওপর কর ও এর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কিছু প্রস্তাব কর্মশালায় তুলে ধরা হয়। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিম্ন স্তরে ৬৩ শতাংশ এবং অন্য তিন স্তরে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখা। এ ছাড়া প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য নিম্ন স্তরে ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা, মধ্যম স্তরে ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা, উচ্চ স্তরে ১১৩ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে প্রজ্ঞা। সংগঠনটি বলেছে, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা দরকার। এ ছাড়া সব তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখতে হবে।

প্রজ্ঞা বলেছে, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর দেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকার চেয়ে ৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বেশি।