এবার ১ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি

লবণ
ফাইল ছবি

ডিম ও আলুর পর এবার লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ।

বাণিজ্যসচিব জানান, দেশে লবণের চাহিদা ২০ লাখ টন। এবার রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ২২ লাখ টন লবণ উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই আমদানির পথে যেতে হয়েছে।

প্রাকৃতিক কারণে লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হতে দেরি হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব। তিনি বলেন, ১৫ দিন আগে থেকেই লবণ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। এটা একটু পিছিয়ে গেছে। এ কারণেই শিল্প মন্ত্রণালয় পূর্বসতর্কতা হিসেবে কিছু লবণ আমদানির পরামর্শ দিয়েছে। বাজারে যাতে লবণের কোনো ঘাটতি না হয় সে জন্যই আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্যসচিব এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গত বছর সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদিত হয়েছিল। এ কারণে কোরবানির ঈদের সময়ও আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যথেষ্ট লবণ ছিল তখন। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাজারে গতকাল ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে লবণ কেনাবেচা হয়েছে।

এদিকে দেড় মাসেরও বেশি আগে ২০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিলেও ভারত থেকে ডিম এসেছে মাত্র ৬১ হাজার ৯৫০টি। দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে বাণিজ্যসচিব বলেন, বার্ড ফ্লু পরীক্ষা একটা বড় কারণ। তবে সমস্যা মিটে গেছে। এখন ডিম আসতে থাকবে। আলু কিছু এসেছে, আরও আসবে।

ডিসেম্বরের শেষে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানান বাণিজ্যসচিব। বলেন, ‘আগামী এক মাস হয়তো আমাদের একটু চাপের মধ্যে থাকতে হবে। তবে দ্রব্যমূল্য কমাতে চেষ্টা করছি। নতুন উৎপাদিত পণ্য বাজারে এলে মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। তবে বাজার তদারকির কারণে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তদারকি না থাকলে দাম আরও বেশি বাড়ত।’ আমদানির কারণে ডিম ও আলুর দাম কমছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব।

বাণিজ্যসচিব বলেন, মৌসুমটা বছরের শেষ পর্যায়ে। এমন সময় বাজারে স্টক থাকে না। কৃষকের চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে পণ্য বেশি থাকে। এ কারণে এ সময়ে দাম বাড়ে। তা ছাড়া এ বছর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। পেঁয়াজের যে রপ্তানি মূল্য ভারত নির্ধারণ করেছে, তাতে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৩০ টাকার বেশি।

দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে স্থানীয় পর্যায়ে তদারকসহ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তপন কান্তি ঘোষ। তবে অক্টোবরে পেঁয়াজ, আলু, ডিম ইত্যাদি পণ্যের দাম বেশি হয়ে গেছে বলে স্বীকার করেন বাণিজ্যসচিব। তবে এও বলেন, ‘এটা শুধু আমাদের কারণে নয়। যেমন পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ভারতের রপ্তানি বন্ধের কারণে। আলু আমদানি বন্ধ ছিল। আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।’

কৃষিপণ্যের বেলায় একটা জিনিস মনে রাখতে হবে বলে সতর্কবার্তা দেন তপন কান্তি ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, আলু কেউ যদি মজুত করে রেখে পচিয়ে ফেলেন, ‘তাহলে ব্যবসায়ীর কি কোনো লাভ আছে?’ নিজেই আবার জবাব দেন। বলেন, ‘লাভ তো নেই। সুতরাং আমার যেটা মনে হয় এ ধরনের পচনশীল পণ্যের দাম বাড়ার কারণ দেখতে হবে। আমাদের দেখতে হবে যে সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা আছে কি না। অথবা হঠাৎ কোনো কারণে চাহিদা বেড়ে গেল কি না।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি থাকা সত্ত্বেও নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘এরপরও আমাদের কিন্তু ভরসা করতে হয় যারা বিক্রেতা, যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের ওপরেই।’ দোকানে দোকানে গিয়ে প্রতিনিয়ত পাহারা দিতে না পারার অপারগতাও প্রকাশ করেন তিনি।