গুণীজন সম্মানের সংস্কৃতি গড়ে উঠুক

ছবি: প্রথম আলো

গবেষণা, নীতিনির্ধারণ ও উন্নয়ন চিন্তায় অনন্য অবদানের জন্য প্রয়াত অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান (মরণোত্তর) ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রওনক জাহানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের যোগ দেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তারা সমাজের সর্বস্তরে এভাবে গুণীজনকে সম্মান জানানোর সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

দুই গুণীজনের জীবন-কর্মের প্রতি সম্মান জানাতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে যৌথভাবে ‘গুণীজন সংবর্ধনা ২০২২’ আয়োজন করে বাংলা দৈনিক বণিক বার্তা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। আয়োজনের প্রধান সহযোগী ছিল ইউনাইটেড গ্রুপ।  

অনুষ্ঠানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন রওনক জাহানের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। আর প্রয়াত আকবর আলি খানের পরিবারের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রওনক জাহান বলেন, শিক্ষক হিসেবে আমি বেশির ভাগ সাদামাটা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গেছি, এবারের জাঁকজমক অনুষ্ঠানে এসে আমি অভিভূত। আমার কর্মজীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার দিনগুলোতে। শিক্ষাজীবনে চমৎকার সময় কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডে, যেখানে আমি শিখেছি ‘স্কাই ইজ মাই লিমিট’।

ছবি: প্রথম আলো

মরণোত্তর সম্মাননা প্রাপ্ত আকবর আলি খানের পক্ষে সম্মাননা নেন তাঁর ভাতিজি রুবিনা খান। তিনি আকবর আলি খানকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, আমি দুঃখ প্রকাশ করে বলতে চাই, আশা ছিল তাঁর (আকবর আলি খান) মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক প্রকাশ করা হবে।

অনুষ্ঠানে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন। আর অনুষ্ঠানস্থল ছিল আমন্ত্রিত অতিথিতে পূর্ণ।  

সিপিডি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, ‘রওনক জাহানকে নিয়ে বলার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি আমি নই। আর আকবর আলি খান সশরীর আমাদের মাঝে নেই। তবে তিনি ছিলেন একজন পণ্ডিত, একজন দক্ষ আমলা।’

ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, রওনক জাহানের সঙ্গে আমার অনেক গল্প রয়েছে। আর আকবর আলি ভাইয়ের সঙ্গে ছিল আমার খুব ভালো সম্পর্ক।
উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, রওনক জাহানের সবচেয়ে ভালো বইটি ইংরেজিতে লেখা। আশা করি সেটা বাংলায় অনুবাদ হবে। তাহলে সাধারণ পাঠক তার সম্পর্কে আরও ভালো জানতে পারবে। অন্যদিকে আকবর আলি খানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার লেখালেখি আমাদের সমৃদ্ধ করেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দুজন মানুষ নির্দিষ্ট পরিচয়ের গণ্ডি পেরিয়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত। আজ যেভাবে এ দুই গুণীজনকে সম্মান দেওয়া হলো তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, রওনক জাহান নারী উন্মেষের উদাহরণ। আর একজন আমলা একাধারে কতটা বুদ্ধিদীপ্ত হতে পারে তা আকবর আলি খানকে দেখলে বোঝা যায়। সামাজিকভাবে এসব গুণীজনকে যেমন সম্মান দেওয়া উচিত, তেমনি প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র থেকেও সম্মান জানানো উচিত।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, গুণীজনদের সম্মান দেওয়া সমাজের জন্য গৌরবের। তাঁরা এই সম্মানের দাবিদার। তাঁদের মাধ্যমে জাতি অনেক উপকৃত হয়েছে।

ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রওনক জাহান নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম সারির একজন ব্যক্তি। আর আকবর আলি খান ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও অদম্য একজন মানুষ। হুইল চেয়ারে বসে তিন ঘণ্টা টানা কাজ করতে পারতেন তিনি।

বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। সূচনা বক্তব্যের পর সংবর্ধিত দুই গুণীজনের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া প্রয়াত আকবর আলি খান স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম প্রমুখ।