শিশুপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি চিন্তা বাড়াচ্ছে মা–বাবার

প্রতীকী ছবি

দেশের পণ্যবাজার বেশ কয়েক মাস ধরে অস্থিতিশীল। এর মধ্যেই অনেকটা নীরবে বেড়েছে শিশুপণ্যের দাম। আমদানি করা শিশুপণ্যের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। তাতে স্থানীয় উৎপাদক ও পরিবেশকেরা মূল্য সমন্বয় করেছেন। শিশুপণ্যের দাম বাড়ার ফলে চাপে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মা–বাবারা।

রাজধানীর গুলশান ডিসিসি মার্কেট, মহাখালী বাজার, কারওয়ান বাজার ও নিউমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, শিশুর জন্য বিকল্প দুধ সেরেলাক, কর্নফ্লেক্স, বেবি কাস্টার্ড, পাস্তা ও নুডলসের দাম যেমন বেড়েছে; একই সঙ্গে বেড়েছে শিশুদের ডায়াপার, সাবান, শ্যাম্পু, লোশন, বডিওয়াশ, বেবি লন্ড্রি ডিটারজেন্ট, ওয়াকার ও খেলনার মতো পণ্যের।

‘এমনও হয়েছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে শিশুখাদ্যের দাম কেজিতে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ডলারের বাজারের যে অবস্থা, তাতে সামনে শিশুপণ্যের বাজার কোন দিকে যাবে, তা এখনই আন্দাজ করা যাচ্ছে না।’
শাহনোয়ার হোসেন, রাজধানীর গুলশানের আমদানিকারক সাইকা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী

স্কুলগামী শিশুদের ব্যবহার্য স্কুলব্যাগ, খাতা, কলম, রবার, পেনসিলের মতো শিক্ষা উপকরণেরও দাম বেড়েছে। এসব পণ্যের দাম কোনোটা বেড়েছে গত ছয় মাসে, কোনোটা গত তিন মাসে। আবার কোনোটা গত এক মাসের মধ্যে। এমনও হয়েছে, গত ছয় মাসে একাধিকবার বেড়েছে কয়েকটি পণ্যের দাম।

দেশে আমদানি করা শিশুখাদ্যের বাজারে বিকল্প দুধের বেশ চাহিদা রয়েছে। এসব পণ্যের বড় একটা অংশ আমদানি করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে বাজারে যে ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে রয়েছে নিডো, ল্যাকটোজেন, কাউ অ্যান্ড গেট, সিমিলাক ও অ্যাপটামিল। এর মধ্যে কাউ অ্যান্ড গেট ব্র্যান্ডের ৮০০ গ্রামের একটি প্যাকেট এখন ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিন মাসের মধ্যে এটার দাম বেড়েছে ৯০০ টাকা। আড়াই কেজির একটা নিডোর দাম এখন দোকানভেদে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা। তিন সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে।

বাজারে আমদানি করা ডায়াপারের দামও এখন বেশ চড়া। ব্র্যান্ডভেদে ৪২ থেকে ৫০টির একটি বড় ডায়াপারের প্যাকেটের দাম এখন ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। তিন মাস আগেও এসব পণ্যের দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ছিল। ব্র্যান্ডভেদে দেশি ডায়াপারের দামও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

রাজধানীর গুলশানের আমদানিকারক সাইকা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শাহনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনও হয়েছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে শিশুখাদ্যের দাম কেজিতে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ডলারের বাজারের যে অবস্থা, তাতে সামনে শিশুপণ্যের বাজার কোন দিকে যাবে, তা এখনই আন্দাজ করা যাচ্ছে না।’

মাইশা আহমেদ রাজধানীর ওয়ারী থেকে গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে শিশুখাদ্য কিনতে আসেন। ১০ মাস বয়সী সন্তানের জন্য তিনি কাউ অ্যান্ড গেট ব্র্যান্ডের পণ্য খুঁজছিলেন। তিনি বলেন, ‘দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি কৌটায় ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে দুধ কিনতে হলো। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আর খাওয়াতে পারব না।’

আমদানি করা ২৫০ গ্রামের শিশুদের পাস্তার প্যাকেট ৩০০ থেকে বেড়ে এখন ৪০০ টাকা। দেশি পাস্তা ও নুডলসের দামও ছয় মাসে বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ।

শিশুদের জন্য গুঁড়া দুধের তৈরি খাবারও বেশ জনপ্রিয়। গত ছয় মাসে একাধিকবার দেশের বাজারে এসব গুঁড়া দুধের দাম সমন্বয় হয়েছে। ব্র্যান্ডভেদে গুঁড়া দুধের কেজি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে এখন সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে গুঁড়া দুধ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান আরলা ফুডস বলছে, পণ্যের মূল্যমান নির্ধারণ একাধিক বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ নির্দেশকের ওপর নির্ভরশীল থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে দুধের মূল্যবৃদ্ধি, সরবরাহের খরচ, আমদানি শুল্ক ইত্যাদির কারণে এ মূল্যমান প্রভাবিত হতে পারে।

শিশুদের জন্য আমদানি করা খেলনার দাম দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ শতাংশ বেড়েছে উল্লেখ করে গুলশানের সানি ট্রেডিংয়ের বিক্রয়কর্মী খলিল মোল্লা বলেন, ‘আমদানি করা যে গাড়িটা ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতাম, তা এখন ৬ হাজার ৫০০ টাকা। ডলারের কারণে এই দাম বেড়েছে।’