শ্রম অধিকারের আরও উন্নয়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র 

দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া অঞ্চলের ইউএসটিআরের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গতকাল বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল বৈঠক করেছে।

বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র। এটি হলে বাংলাদেশে দেশটির বিনিয়োগ বাড়বে। এ নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে গতকাল রোববার ঢাকায় সচিবালয়ে বৈঠক হয়েছে। এ দেশে শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সফররত বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া অঞ্চলের একটি দল একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। এতে মোটাদাগে ১১টি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েই বৈঠকটি হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ ও যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া অঞ্চলের সহকারী ইউএসটিআর ব্রেন্ডন লিঞ্চ নেতৃত্ব দেন। এতে অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা এবং ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ইউএসটিআরের জ্যেষ্ঠ কমার্শিয়াল বিশেষজ্ঞ শিল্পী ঝা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ সব সময়ই শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজারের দাবি করে আসছে। উন্নয়নকাজের জন্য দেশটির ‘ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন’ (ডিএফসি) নামক তহবিল থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন করতে হবে। কিছু আইনের উন্নয়ন হলেও বাস্তবায়ন আরও ভালো করতে হবে। 

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সব উন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। বলেছি, এক আইনে আফ্রিকার দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। আফ্রিকার গরিব আর এশিয়ার গরিবদের  মধ্যে বৈষম্য যৌক্তিক নয়।
তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বিদ্যমান আইনে কমপক্ষে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন করা যায়। তা আরও কম চান তাঁরা। তাঁরা চান, শ্রম আইনে অপরাধী মালিকদের শাস্তি বাড়ানো হোক এবং কোনো ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন হওয়ার পর সদস্যসংখ্যা ২০ শতাংশের নিচে হলেও তা যেন বাতিল না হয়। বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সব উন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। বলেছি, এক আইনে আফ্রিকার দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। আফ্রিকার গরিব আর এশিয়ার গরিবদের মধ্যে বৈষম্য যৌক্তিক নয়।’ 

১১টি কর্মপরিকল্পনা

যে ১১টি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছে ইউএসটিআরের আঞ্চলিক দল, তার প্রথমটিই হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক ও শ্রম অধিকারকর্মীদের যাঁরা নিপীড়ন করেন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালান, তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এর পরেই রয়েছে শ্রমিকনেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কাজ করে, এমন কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা। 

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলো যে মানের অধিকার ভোগ করে, সে অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রম আইনের সংশোধন চায় ইউএসটিআর। বিদ্যমান শ্রমবিধিরও সংশোধন চায় তারা।

ইউএসটিআরের আঞ্চলিক দলটি বলেছে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোর (ইপিজেড) শ্রমিকেরা যাতে পুরোদমে ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইনের ৩৪ নম্বর ধারা সংশোধন করতে হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (এসইজেড) সেটির প্রয়োগ এবং সেখানকার শ্রমিকেরা যাতে সংগঠিত হতে পারেন ও সম্মিলিতভাবে দর-কষাকষিতে সক্ষম হন, তা–ও নিশ্চিত করতে হবে। 

ট্রেড ইউনিয়ন করার আবেদনের প্রক্রিয়া ৫৫ দিনের মধ্যে শেষ করার কথাও বলেছেন ইউএসটিআরের প্রতিনিধিরা। বলেছেন, শ্রম অধিদপ্তর যেন তার বিদ্যমান অনলাইন নিবন্ধন পোর্টালে অপেক্ষমাণ থাকা সব আবেদনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। 

বার্ষিক বাজেটের মাধ্যমে শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ এবং এ জন্য তহবিল বরাদ্দ, আরও শ্রম পরিদর্শক পদ অনুমোদন এবং নিবন্ধন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার অভ্যাসগুলো বন্ধের কথাও বলেছে ইউএসটিআর। 

এদিকে ইউএসটিআরের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিসের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিজেদের দুর্বলতা থাকলে বাইরের চাপ আসবেই। যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে যে অধিকার দেওয়া আছে এবং আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থার আইনকানুনে বাংলাদেশের অনুসমর্থন রয়েছে, তার সঙ্গে ইউএসটিআরের চাওয়াগুলোয় কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। 

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, শ্রমিকদের দাবি সব সময়ই অবহেলা করা হয়েছে। তবে বিষয়গুলো একেবারে নতুন নয়। মজুরি নির্ধারণের সময় আন্দোলন দমন করতে মালিকপক্ষ যে পুলিশি ব্যবস্থা নেয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে ইউএসটিআরের কর্মপরিকল্পনায় কিছু বিষয় নতুন করে এসেছে।