সোনার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হলো যে পাখির পালক

হুইয়া পাখির যে পালক নিলাম করা হয়েছে।ছবি: ওয়েবস

নিউজিল্যান্ডের হুইয়া পাখির একটি পালক ২৮ হাজার ৩৬৫ মার্কিন ডলারে (৪৬ হাজার ৫২১ নিউজিল্যান্ড ডলার) বিক্রি হয়েছে। প্রকৃতি থেকে এই পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে পাখির এই পালকটি খুব বিরল ও মূল্যবান। নিলামে এখন পর্যন্ত যত পাখির পালক বিক্রি হয়েছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে দামি পালক হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে।

ধারণা করা হয়েছিল এটি ২ থেকে ৩ হাজার মার্কিন ডলার দামে বিক্রি হতে পারে। কিন্তু নিলামে এটির দাম সব ধারণাকে ছাড়িয়ে যায়। দামের দিক থেকে এটি নতুন রেকর্ডও গড়েছে। এর আগে ২০১০ সালে নিলামে বিক্রি হওয়া হুইয়া পাখির একটি পালকের রেকর্ড দাম উঠেছিল। তখন ওই পালকটি বিক্রি হয়েছিল ৮ হাজার ৪০০ ডলারে।

নিউজিল্যান্ডে সর্বশেষ নিলামে তোলা পাখির পালকটির ওজন ছিল ৯ গ্রাম। ফলে দেখা যাচ্ছে যে এটি সোনার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। গোল্ড ব্রোকার থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, প্রতি গ্রাম সোনার দাম এখন ১২৭ মার্কিন ডলার। সেখানে প্রতি গ্রাম হুইয়া পাখির পালকের দাম পড়েছে ৫ হাজার ১৬৯ মার্কিন ডলার।

নিউজিল্যান্ডের ওয়াটেলবার্ড প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল হুইয়া। চমৎকার গান করত এই পাখি। শরীরে পালকের বেশির ভাগই কালো, লম্বা লেজের শেষে সাদা ছোপ। সেই ১৯০৭ সালে সর্বশেষ বার এই পাখি দেখা গিয়েছিল। তবে মনে করা হয়, ১৯২০–এর দশক পর্যন্ত হয়তো হুইয়া পাখি জীবিত ছিল।

মাওরিদের কাছে হুইয়া ছিল পবিত্র পাখি। তাদের গানে–কথায় বারবার এই পাখির প্রসঙ্গ এসেছে। মূলত মাওরি গোত্রপ্রধানেরা এর পালক পরিধান করতে পারতেন। তবে অতি মর্যাদাশালীদেরও এ সুযোগ দেওয়া হতো। নিউজিল্যান্ডে যখন ইউরোপীয়রা আসে, তখনই হুইয়া পাখি বিরল ছিল। কিন্তু এর পালকের জন্য ইউরোপীয়দের আকাঙ্ক্ষা একে নির্বংশ হওয়ার পথে ঠেলে দেয়।

হুইয়া পাখির কিছু একটা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুরো বিশ্বে এখনো প্রবল। ২০২৩ সালে ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত এক নিলামে মৃত এক জোড়া হুইয়া পাখি ৪ লাখ ৬৬ হাজার নিউজিল্যান্ড ডলারে বিক্রি হয়েছিল। সে সময় সাধারণ মানুষ নিউজিল্যান্ড সরকারকে ওই নিলামে হস্তক্ষেপ করে মৃত পাখিগুলোকে ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ জানিয়েছিল।

গত সোমবার পাখির পালকটি বিক্রি হয়েছে অকল্যান্ডের ওয়েবস নিলাম কেন্দ্রে। সেখানকার ডেকোরেটিভ আর্টস বিভাগের প্রধান লিয়া মরিস মনে করেন, পালকটির চমৎকার অবস্থা, আর্কাইভের জন্য ব্যবহার করা কাগজ ও ইউভি গ্লাসের মাধ্যমে এটি সংরক্ষণ করা এবং হুইয়া পাখির গল্প—এসবই নিলামে দাম উঠতে সহায়তা করেছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানকে লিয়া মরিস বলেন, ‘হুইয়া একটি আইকনিক পাখি। অনেক মানুষই এই পাখির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে একাত্ম বোধ করে।’

ওই নিলাম কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত যত হুইয়া পাখির পালক এসেছে, তাদের মধ্যে এটির অবস্থাই ছিল সবচেয়ে ভালো। লিয়া মরিস বলেন, ‘পালকটি খুব বেশি দলা পাকিয়ে যায়নি। পালকের রং মোটামুটি ঠিকঠাকই আছে। এর গাঢ় খয়েরি ও উজ্জ্বল রং রয়েছে। আর পোকা এটির ক্ষতি করেছে এমন কোনো প্রমাণ দেখা যাচ্ছে না।’

নিউজিল্যান্ডের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় পালকটিকে একটি ‘তাওঙ্গা তুতুরু’ হিসেবে নিবন্ধিত করছে, যার মানে হলো এটি খাঁটি সম্পদ। এই ধরনের সম্পদ ক্রয়ের জন্য নিবন্ধিত ব্যক্তিরাই কেবল তা কিনতে পারেন। আর এই পালক অনুমতি ছাড়া নিউজিল্যান্ড ত্যাগ করতে পারবে না।

হুইয়া পাখির পালকটি কোথা থেকে এসেছে, সে সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। তথ্য গোপন রাখার শর্ত থাকার কারণে লিয়া মরিস জানাতে পারেননি যে এটি কে বিক্রি করেছেন কিংবা কে এটি কিনেছেন। তবে তিনি বলেন, দুজনেই নিউজিল্যান্ডভিত্তিক নিবন্ধিত সংগ্রহকারী। দেশের বাইরে থেকে কেউ নিলামে অংশ নেয়নি।