মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে জোরালো আন্দোলন, ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল–সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা এ নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তবে শুধু কলাম্বিয়ায় নয়, যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল–সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ বা যেসব বিনিয়োগ থেকে ইসরায়েল লাভবান হয়, সেসব বিনিয়োগ প্রত্যাহার করার দাবি জোরালো হচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অস্ত্র উৎপাদনে বিনিয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড অধিকৃত করে রাখার মধ্য দিয়ে লাভবান হচ্ছে—এমন তহবিল ও ব্যবসা থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।
এর মধ্যে গুগল এবং এয়ার বিএনবিও আছে। ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে গুগলে চুক্তির প্রতিবাদ করায় এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি প্রায় ৫০ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে। অন্যদিকে এয়ার বিএনবি অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে সহায়তা করছে।
যদিও গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি বাস্তবায়িত হলেও ইসরায়েল ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ ক্ষতি হবে না। তাঁরা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিলে বা ভোট দেওয়ার অধিকার হারালে উল্টো ফল হবে। তখন এসব কোম্পানির কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। এতে ওই কোম্পানিগুলো যা খুশি তা-ই করার সুযোগ পাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পর্যন্ত ইসরায়েল–সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলের সমর্থকেরা বলেন, এসব দাবি অন্যায্য এই অর্থে যে ইসরায়েল সব সময় হামলার হুমকিতে আছে। একই সঙ্গে এই দাবি ইহুদি–বিদ্বেষ সম্পর্কিত। কারণ, বিশ্বের ইহুদি–অধ্যুষিত দেশকে লক্ষ্য করেই এসব দাবি করা হয়। বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞাবাদীরা এ ধরনের অভিযোগ করেন।
ফিলিস্তিনপন্থী এই আন্দোলনকারীদের একাংশ অবশ্য ইহুদি। তাঁরা মনে করেন, এই বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষকে চাপে রেখে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করার অব্যর্থ কৌশল। এই দাবির মধ্য দিয়ে তাঁদের দাবির সপক্ষে সমর্থন তৈরি হবে। এ ধরনের তৎপরতা অবশ্য নতুন নয়। ১৯৮০-এর দশকের ছাত্ররাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চাপ দিয়ে বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসারত কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারে বাধ্য করেছিল। জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও একই কৌশল কাজে লেগেছিল।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক রে গুরেরো নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, প্রথমত তাঁরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ফল দেখতে চান। কারণ, এখানেই তাঁদের সবচেয়ে শক্তিমত্তা সবচেয়ে বেশি। তাঁরা আশা করছেন, এই আন্দোলন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে—তখন কোম্পানিগুলো বুঝবে, এই আন্দোলনের ফল কী।
যেসব কোম্পানি লক্ষ্যবস্তু
ছাত্রদের এই দাবির সপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক পত্রিকাগুলো। কর্নেল ডেইলি সান অস্ত্র কোম্পানি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবিতে সমর্থন জানিয়েছে। যেসব কোম্পানি সরাসরি ইসরায়েলের সমর্থনে কাজ করে, সেসব কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের এই দাবি উঠেছে।
ডেইলি সান লিখেছে, যে যুদ্ধ বেসামরিক মানুষের জীবনের প্রতি ন্যূনতম বিবেচনা ছাড়াই চালানো হচ্ছে, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত হবে না, সেই যুদ্ধে সহায়তা দেওয়া।
এদিকে যেসব কোম্পানি সরাসরি ইসরায়েলের যুদ্ধে জড়িত নয়, সেসব কোম্পানি থেকেও কলাম্বিয়ার ছাত্ররা বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে, যেমন ক্যাটারপিলার, গুগল ও এয়ার বিএনবি।