দেশে এখন সাড়ে ৯ কোটি মানুষের মুঠোফোন আছে

মুঠোফোন ছাড়া এখন জীবন প্রায় অচল। আপনার হাতে যদি মুঠোফোন না থাকে তবে জীবনটা পানসে মনে হতে পারে। দেশে এখন কত মানুষের মুঠোফোন আছে, সেই প্রশ্নও জাগতে পারে অনেকের মনে। এর একটি উত্তর উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে। সেই জরিপ বলছে, বর্তমানে দেশে ৯ কোটি ৫০ লাখ ৫২ হাজার ৪২৮ জনের মুঠোফোন আছে। যাঁদের মুঠোফোন আছে, তাঁদের মধ্যে ৫ কোটি ৫১ লাখ পুরুষ ও ৩ কোটি ৯৯ লাখের বেশি নারী।

বিবিএস বলছে, বাংলাদেশে এখন অর্ধেকের বেশি পরিবারে অন্তত একটি করে স্মার্টফোন আছে। সে অনুযায়ী দেশের ২ কোটি ২০ লাখ ২ হাজার ৯৯২ বা ৫২ শতাংশ পরিবারে এখন স্মার্টফোন আছে। তবে স্মার্টফোনওয়ালা পরিবারের সংখ্যা শহরের চেয়ে গ্রামে দ্বিগুণ। শহরে যেখানে ৭৪ লাখ পরিবারে স্মার্টফোন আছে, সেখানে গ্রামে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১ কোটি ৪৬ লাখ।

বিবিএস ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সুবিধার ওপর এই জরিপ করে। গতকাল রোববার জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জরিপে মুঠোফোন ব্যবহারের হিসাবটি পাঁচ বছরের বেশি বয়সের জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ৩০ হাজার ৮১৬টি পরিবারের কাছ থেকে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ করে মুঠোফোন, রেডিও-টিভি, ট্যাব, ইন্টারনেটসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয় জরিপে।
নিজের মুঠোফোন না থাকলেও অনেকে পরিবার-পরিজনের মুঠোফোনে কথা বলেন।

যেমন মা-বাবার নিজের ফোন না থাকলেও সন্তান বা অন্যের ফোন ব্যবহার করেন। অন্যের ফোন ব্যবহারকারী এমন ব্যক্তির সংখ্যা আরও প্রায় সাড়ে চার কোটি। তাতে সব মিলিয়ে মুঠোফোন ব্যবহারকারী নারী-পুরুষের সংখ্যা ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপমতে, নিজের মুঠোফোন আছে, এমন মানুষের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি। এই বিভাগের প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে নিজের মুঠোফোন। আর সবচেয়ে কম মুঠোফোন রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। সেখানে সাড়ে ৫৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর নিজের ফোন আছে।

এবার নজর দেওয়া যাক স্মার্টফোনের দিকে। স্মার্টফোন সবকিছু বদলে দিচ্ছে। ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, মেসেঞ্জারসহ নানা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা যায়। আবার সংবাদপত্র পড়াসহ বিভিন্ন তথ্য জানতেও স্মার্টফোন লাগে। এ জন্য দরকার হয় ইন্টারনেট। সেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়, ৫ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৩১৭ জন। পরিবার বিবেচনায় নিলে বলা যায়, ১ কোটি ৬০ লাখ পরিবারের ইন্টারনেট সংযোগ আছে। এই তথ্যও বিবিএসের জরিপে উঠে এসেছে।

স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। ফলে পুরো বিশ্বই যেন থাকে হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে দিনে অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৬৮ শতাংশ। এই তালিকায় অবশ্য ময়মনসিংহ বিভাগের লোকজন সবচেয়ে এগিয়ে আছে। সেখানকার প্রায় ৭৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দিনে অন্তত একবার অনলাইনে ঢুঁ মারেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে রংপুর বিভাগ। সেখানে এই হার সাড়ে ৬২ শতাংশের ওপরে।

জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোবাইল ফোন এখন দেশের মানুষের টেলিযোগাযোগের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাই নিজের ফোন কেনার সাধ্য না থাকলেও অন্য কারও বা পরিবারের অন্য সদস্যের ফোন ব্যবহার করে মানুষ যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। এই যোগাযোগ যত দৃঢ় হয়, অর্থনীতিতে তা তত বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দেশজুড়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) দেওয়া সম্ভব হচ্ছে শক্তিশালী মোবাইল নেটওয়ার্কের কারণে।’

মোহাম্মদ জুলফিকার আরও বলেন, ‘শুধু টাকা আদান–প্রদানেই কেন, অন্য অনেক ক্ষেত্রেও মুঠোফোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন ব্যবসা, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ই-কমার্স, সরকারি সেবা গ্রহণ, রাইড শেয়ারিং ইত্যাদি। তা ছাড়া মোবাইল অপারেটররা সরাসরি সরকারকে তাদের আয়ের একটি অংশ প্রদান করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুঠোফোনই মূল ভূমিকা রাখছে এবং রাখবেও।’