ভারতে টমেটোর দাম ২০০ থেকে ৩ রুপিতে নেমেছে

টমেটো
ফাইল ছবি

মাসখানেক আগেও ভারতে টমেটোর দাম ছিল প্রতি কেজি ২০০ রুপি। সেই টমেটোই এখন ৩-৫ রুপিতে নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের চাষিরা টমেটো ফেলে দিচ্ছেন বা ধ্বংস করে ফেলছেন।

দাম এতটা পড়ে যাওয়ার কারণ, এবার টমেটোর বিপুল উৎপাদন হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে চাষি ও বাজারসংশ্লিষ্ট মানুষেরা হতচকিত হয়ে পড়েছেন।

মহারাষ্ট্রের নাসিকের কৃষিকর্মী শচীন হোলকার বলেন, বাজারের এ ধরনের ওঠানামা ঠেকানোর একমাত্র পথ হচ্ছে, টমেটোর জন্য ন্যূনতম মূল্য সহায়তার ব্যবস্থা করা।

এই পরিস্থিতিতে যে চাষিরা টমেটো বিক্রি করেছেন তাঁদের ভাষ্য হচ্ছে, বিনিয়োগের অর্ধেক অর্থও তোলা সম্ভব হয়নি। এক একর জমিতে টমেটো চাষ করতে অন্তত দুই লাখ রুপি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।

মহারাষ্ট্রের পুনেতে টমেটোর দাম কেজিতে পাঁচ টাকায় নেমে এসেছে। নাসিকে ২০ কেজি টমেটোর দাম ছয় সপ্তাহ আগেও ছিল দুই হাজার রুপি, এখন তা ৯০ রুপিতে নেমে এসেছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভারতের বাজারে টমেটোর দাম কমছে। এই পরিস্থিতি দেখে পুনে জেলার বিভিন্ন গ্রামে কৃষকেরা টমেটো চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন। মহারাষ্ট্রে টমেটোর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হলো পিমপালগাঁও। সেখানে দৈনিক ৪০ লাখ কেজি টমেটোর নিলাম হয়। সেখানেও দাম অনেকটা পড়ে গেছে।

মহারাষ্ট্র কৃষি দপ্তরের তথ্যানুসারে, নাসিক জেলায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়। সেখানে টমেটো উৎপাদন হয় ছয় লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু চলতি বছর ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার সেখানে ১২ দশমিক ১৭ লাখ টন টমেটো উৎপাদিত হবে।

মহারাষ্ট্রের নারায়ণগাঁও টমেটো বাজারের সাধারণ সম্পাদক শারদ গোঙ্গাদে বলেন, জুলাই মাসে ২০ কেজি টমেটোর খুচরা মূল্য ৩ হাজার ২০০ রুপিতে উঠে গেলে অনেক চাষি বিপুল মুনাফার আশায় টমেটো চাষ শুরু করেন। কিন্তু ভালো ফলন হওয়ায় তাঁদের সব হিসাব–নিকাশ বদলে যায়।

সোলাপুর জেলার কৃষক বিবেক পাটি দেড় একর জমিতে টমেটোর চাষ করেছিলেন। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় তিনি সব টমেটো ধ্বংস করে ফেলেছেন। ক্ষতি কমাতে তিনি এ কাজ করেছেন। এই ফসল মাঠ থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করতে গেলে তাঁর আরও বেশি ক্ষতি হতো।

টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বিবেক পাটি বলেন, ‘মাঠ থেকে ২ হাজার ৩০০ কেজি টমেটো তুলে পার্শ্ববর্তী বাজারে নিয়ে যেতে ৮ হাজার ৫০০ রুপি ব্যয় হতো। বিক্রি করে ৪ হাজার রুপির বেশি পাওয়া যেত না। টমেটো আবাদ ও পরিচর্যা করতে এক লাখ রুপির মতো ব্যয় হয়েছে।’

বিবেকের মতো সোলাপুর জেলার আরও অনেক কৃষক এই পরিস্থিতিতে মাঠেই টমেটো পচিয়েছেন বা ট্রাক্টর দিয়ে ধ্বংস করে ফেলেছেন।

এই পরিস্থিতিতে জুনার ও আমবেগাঁও তহসিলের কৃষকেরা গত সপ্তাহে মাচারে বৈঠক করেছেন। তাঁদের পরিকল্পনা হলো, মুম্বাই শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা। সেখানে তাঁরা দামের এ রকম ওঠানামা ঠেকাতে টমেটোর সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বেঁধে দেওয়ার দাবি জানাবেন।