সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণে তদারকি মাশুল প্রত্যাহারের দাবি ব্যবসায়ীদের

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভোক্তাদের একাংশ

সিএমএসএমই (অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি) ও ভোক্তা ঋণে আরোপিত ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ বা তদারকি বাবদ অর্থ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। একই সঙ্গে যে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব থেকে এই অর্থ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে দোকান মালিকদের এই সংগঠন।

আজ রোববার রাজধানীর মগবাজারে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও ক্ষুদ্র মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়াসহ সংগঠনটির অন্য নেতারা।

হেলাল উদ্দিন বলেন, সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে সুদহারের অতিরিক্ত ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ আদায় করা হচ্ছে। বছরে তা একবার আদায় করার জন্য ব্যাংকগুলোকে বলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হয়নি। এমনকি আলাপ-আলোচনা ছাড়াই ব্যাংক হিসাব থেকে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঋণখেলাপি বেড়ে যাবে, যা ব্যবসায়ীদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।

হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, ৭৫ কোটি টাকা ঋণসীমা পর্যন্ত সিএমএসএমই খাত ধরা হয়। কোনো ব্যবসায়ী যদি এই পরিমাণ টাকা ঋণ নেন, তাহলে ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ কর্তন করা হলে ৭৫ লাখ টাকা চলে যায়। করোনা মহামারি ও তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রায় চার বছর ধরে বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ক্রোকারিজ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনির হোসেন। তিনি বলেন, ৫০ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে তাঁর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মাশুল কেটে নেওয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের যে অবস্থা, তাতে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।

গত সাড়ে তিন বছরে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়েছেন, অনেক শ্রমিক-কর্মচারী কর্মহীন হয়েছেন বলে জানান হেলাল উদ্দিন। এর মধ্যে সিএমএসএমই খাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে ব্যাংকঋণের সুদহারও বেড়েছে। সুদের হার আরেক দফা বাড়ানো হবে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ অবস্থায় সুপারভিশন চার্জ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে হেলাল উদ্দিনের দাবি, এর মধ্যে যাদের কাছ থেকে এই মাশুল নেওয়া হয়েছে, আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে তা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। তা না হলে সিএমএসএমই খাতের ব্যবসায়ীরা জীবন-জীবিকার স্বার্থে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, তদারকি সেই অর্থে কিছু করা হয় না। ফলে এই তদারকি মাশুল নেওয়ার অর্থ হয় না। বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই মাশুল নেওয়া হচ্ছে না, কিন্তু ছোটদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে।

দোকান মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাউস অ্যান্ড ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাইয়ুম তালুকদার, বাংলাদেশ ঘড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মালিক, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন, বাংলাদেশ বাইসাইকেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কেমিক্যাল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নেছার উদ্দিন মোল্লা, বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিস ইম্পোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের আজমল হোসেন, বাংলাদেশ গ্লাস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন আলমগীর, বাংলাদেশ টাইলস ডিলারস অ্যান্ড ইম্পোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন, বাংলাদেশ জামদানি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা, বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো, বাংলাদেশ চশমাশিল্প ও বণিক সমিতির সহসভাপতি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আজাদ, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য অনজন মজুমদার, বাংলাদেশ আয়রন স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি নাসিরুল্লাহ, বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মাইনুর রহমান, বাংলাদেশ বুটিক হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি শরিকুন্নাহার, বাংলাদেশ পাদুকা ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি শাহীন খান ও বাংলাদেশ বিড়িশিল্প মালিক সমিতির প্রতিনিধি রেজাউল ইসলাম।