উৎপাদন–কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক–কর হ্রাস বা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার শেয়ারবাজারে মূলধনি মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হয়। বাজেটের এসব উদ্যোগের প্রভাব কী হতে পারে—তা নিয়ে কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তা ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের অভিমত নিয়ে এবারের মূল আয়োজন।

মো. নুরুল আফছার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড

দেশে ফ্রিজ ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) উৎপাদনে ব্যবহৃত বিদেশি কমপ্রেসর ও অন্যান্য উপকরণের মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। ফলে ফ্রিজ ও এসির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উদীয়মান এই খাতে ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব সময়োচিত নয়। পণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে।

বাজেটে বলা হয়েছে, এসি স্বল্প আয়ের জনগণ ব্যবহার করে না বিধায় এর কমপ্রেসর আমদানি শুল্কে রেয়াতি হার প্রত্যাহার করা যায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তীব্র গরমের মধ্যে এসির চাহিদা অনেক বেড়েছে। ফলে আমরাও তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে গ্রাহকের কাছে এসি বিক্রির চেষ্টা করছি। এখন কমপ্রেসর আমদানি শুল্ক বাড়লে গ্রাহককে সেই স্বস্তিতে রাখা সম্ভব হবে না।  

এ ছাড়া বাজেট প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে রেফ্রিজারেটর উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কমপ্রেসর উৎপাদন হয় বিধায় এ ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য কমপ্রেসর আমদানি শুল্ক রেয়াত সুবিধা প্রত্যাহার করা যায়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দেশে এখনো বড় আকারে কমপ্রেসর উৎপাদন হচ্ছে না। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই উপকরণটি আমদানি করছে। আবার হুট করে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কমপ্রেসর উৎপাদনে বিনিয়োগ করাও সম্ভব
হবে না। 

বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ফ্রিজ বিক্রি হয়, তার অধিকাংশই দেশে উৎপাদিত; বাকিটা আমদানি করা। দেশে ফ্রিজ উৎপাদনের শুরুর দিকে অন্তত ৬০-৭০ শতাংশ যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। এখন সেটি ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ কাঁচামালে নির্ভরতা কমলেও উৎপাদনে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসেনি। বিশেষ করে কমপ্রেসর আমদানি করতেই হচ্ছে। 

ইলেকট্রনিকস খাতে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে সম্ভাবনাময় খাতটিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি এসেছে। যেমন দেশীয় উৎপাদনকারীদের সুবিধার্থে ফ্রিজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর কমানো হয়েছে, ফ্রিজের খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। তবে এখনো খাতটি পুরোপুরি টেকসই হয়নি। 

উপরন্তু, দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে প্রায় দুই বছরে ডলার-সংকটের চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারেনি ইলেকট্রনিকস খাতের অনেক কোম্পানি। এতে সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে ভুগেছে দেশি-বিদেশি সব কোম্পানি। তার সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি যুক্ত হওয়ায় ফ্রিজের বিক্রিও কমে যায়। 

সরকার রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এ ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে, এটা আমরা বুঝি। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় না নিয়ে ভ্যাট-শুল্ক বাড়ানো হলে তাতে পণ্যের দাম বাড়বে। এতে ভোক্তার চাহিদা কমবে। এটি আবার প্রভাব ফেলবে পণ্যের উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে।     

মো. নুরুল আফছার 

উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড