পরিকল্পনা করে লকডাউন করলে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসার সময় মিলত

দেওয়ান আমিনুল ইসলাম সভাপতি, ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি

ঢাকা নিউমার্কেট ও আশপাশের বিপণিবিতানে কোরবানি ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসাটি মূলত শেষের ১০ থেকে ১৫ দিন হয়। ইতিমধ্যে লকডাউনের কারণে সেই সময়ের বেশির ভাগই শেষ। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দোকানপাট খোলার সুযোগ মিললেও খুব একটা ব্যবসা হবে কি না সন্দেহ আছে। কারণ, করোনার সংক্রমণের হার বাড়ছে। সে জন্য অনেকেই কেনাকাটায় বের হবেন না। আবার অনেকেই ইতিমধ্যে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই মাসের শেষ দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সে কারণে গতবারের পয়লা বৈশাখের ব্যবসা মার খায়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের কয়েক দিন দোকানপাট খোলার সুযোগ পেলেও বিধিনিষেধের কারণে ব্যবসা খুব একটা হয়নি। বিপুল লোকসানের মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে গত বছরের কোরবানির ঈদে মোটামুটি ব্যবসা হয়। চলতি বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পয়লা বৈশাখের ব্যবসায় ধস নামে। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরে ভালো ব্যবসা হয়। যদিও রোজার প্রথম ১১ দিন লকডাউনের কারণে দোকানপাট ও বিপণিবিতান বন্ধ ছিল। করোনা সংক্রমণ আবার ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকায় গত ২৮ জুন থেকে সীমিত ও ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন চলছে।

করোনার কারণে গত বছরের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ছয়টি উৎসবে ব্যবসা হারিয়েছি আমরা। মাঝে শুধু চলতি বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতরে কিছুটা ব্যবসা করতে পেরেছি। যদিও রোজার প্রথম ১১ দিন লকডাউনের আমাদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তারপরও গত ঈদে বেচাবিক্রি মোটামুটি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য কিছুটা রসদ পেয়েছিলেন।

করোনাকালে সাধারণ কেনাকাটা কমে গেছে। বিয়েশাদি ও সামাজিক অনুষ্ঠানও বন্ধ থাকায় বড় উৎসবকেন্দ্রিক বেচাবিক্রিই বর্তমানে বড় ভরসা। লকডাউনের কারণে আসছে কোরবানি ঈদের ব্যবসা মাটি হয়ে গেল। তবে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যদি আরেকটু চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা করে করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন ব্যবস্থাপনা করতেন, তবে হয়তো আমরা আরেকটু ভালো অবস্থানে থাকতাম। কারণ, রোজার ঈদের পর থেকেই ঢাকার বাইরে করোনার সংক্রমণ বাড়ছিল। সেটি বিবেচনায় নিয়ে যদি আরও দুই সপ্তাহ আগে লকডাউন করা হতো, তাহলে হয়তো করোনা পরিস্থিতি আরেকটু নিয়ন্ত্রণে থাকত। তাহলে আমরা ব্যবসায়ীরাও ঈদের ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেতাম।

ঢাকা নিউমার্কেটে সাড়ে পাঁচ শতাধিক দোকান রয়েছে। এসব দোকানে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন কয়েক হাজার কর্মী। লকডাউনের আগে মাসিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করা কর্মীরা বেতন পেলেও অন্যরা আছেন বিপদে। অন্যদিকে, দোকানমালিকদের মধ্যে ১০০ থেকে ১৫০ জন গত মাসের ভাড়া দিতে পারলেও অন্যরা পারেননি। করোনাকালে ব্যবসা মন্দা থাকায় অনেক ব্যবসায়ীই পুঁজি ভেঙে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও দোকানভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন।