শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে দুই মত

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া নিয়ে দুই ধরনের মত পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, করোনায় শিক্ষা খাতে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ক্রম বা রোটেশন করে কিংবা গ্রুপ করে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। যদিও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচির পলিসি উপদেষ্টা আনির চৌধুরী বলেন, এই সময়ে স্কুল–কলেজ খুলে দেওয়া জটিল বিষয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। তাই এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ঠিক হবে না।

আজ রোববার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত 'বিআইডিএস ক্রিটিক্যাল কনভারসেশন ২০২১' শিরোনামের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া নিয়ে দুই ধরনের মতামত উঠে এসেছে।

শিক্ষাকে সামাজিক মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। করোনা সংক্রমণের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বলা হচ্ছে এ সময়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে অনেক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সুবিধা নেই। আবার অনেকের জন্য ইন্টারনেট খরচ বেশি।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।

মসিউর রহমান বলেন, শিক্ষাকে সামাজিক মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। করোনা সংক্রমণের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বলা হচ্ছে এ সময়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে অনেক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সুবিধা নেই। আবার অনেকের জন্য ইন্টারনেট খরচ বেশি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার বিষয়টি ভেবে দরকার।

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া জরুরি। সেটি যেকোনো প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই হোক। সেটি হতে পারে ক্রম করে। অথবা গ্রুপ করে। অথবা এক দিন পরপর। তবে আনির চৌধুরী মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে অনেক দিক বিবেচনা করতে হয়। শ্রেণিকক্ষ ছোট। সেখানে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হবে। তখন করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে।

রেহমান সোবহান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে করোনার পরীক্ষা সবচেয়ে কম। যদি পরীক্ষার হার বাড়ানো হতো, তাহলে সংক্রমণের মাত্রা জানা যেত। তাঁর মতে, বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা অপর্যাপ্ত।

তবে এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সরকারও চায় বেশি পরীক্ষা হোক। করোনা পরীক্ষা সারা দেশে বাড়ানো হয়েছে। পরীক্ষা কম করানোর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিধিনিষেধ নেই। সরকারের সেই সক্ষমতা আছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্কের বিকল্প নেই বলে মত দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, টিকা নিয়ে যে একটা কালো মেঘ আছে এটা বলতে দ্বিধা নেই। টিকা পাওয়া নিয়ে জনমনে একটা ভীতি ও শঙ্কা বিরাজ করছে। চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার চেষ্টা চলছে। মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে সব বড় বড় হাসপাতাল শহরে অবস্থিত। চিকিৎসকেরাও শহরে অবস্থান করছেন। গ্রামের মানুষ চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা পান না। অথচ হওয়া উচিত ছিল ভিন্ন। সব হাসপাতাল হওয়ার কথা গ্রামে। তবে স্বাস্থ্যের এই যে অসমতা এখানে সমতা ফেরাতে সরকার কাজ করছে বলে জানান মন্ত্রী।