হারানো বাজার ধরতে দুটি সুবিধা চান জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশে ১০ লাখ টাকার সোনার অলংকার কিনলে ৫০ হাজার টাকা ভ্যাট দিতে হয়।

জাতীয় বাজেট
প্রথম আলো

দেড় বছর ধরে সোনার দাম আকাশছোঁয়া। অন্যদিকে লকডাউনের কারণে বিয়েশাদি, জন্মদিন বা অন্য সামাজিক অনুষ্ঠানও ব্যাপকভাবে কমেছে। যেটুকু হচ্ছে, তার সবটাই ঘরোয়া পরিবেশে। ফলে জুয়েলার্স ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। অন্যদিকে কয়েক বছর ধরে ক্রেতাদের একটি অংশ ভারত থেকে সোনার অলংকার কিনতে উৎসাহ দেখাচ্ছে। সব মিলিয়ে হারানো বাজার ধরতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে দুটি সুবিধা চেয়েছেন জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরা।

জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরা সোনার অলংকারের ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে দেড় শতাংশে নামিয়ে আনার পাশাপাশি প্রতি ভরি সোনা আমদানিতে ২ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকা শুল্ক নির্ধারণের দাবি করেছেন। অন্যান্য বার বেশ কয়েকটি দাবি জানালেও চলতি বছর এই দুটি দাবি আগামী বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য লিখিত আকারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

সোনার অলংকারের ওপর ভ্যাটের হার কমানোর বিষয়ে সমিতির যুক্তি হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, দুবাই ও থাইল্যান্ডে ভ্যাট ৫ শতাংশ হলেও বিমানবন্দর থেকে তা ফেরত পান আন্তর্জাতিক ক্রেতারা। অন্যদিকে ভারতে ভ্যাটের হার ৩ শতাংশ। দেশটির ভিসা সহজলভ্য হওয়ায় বাংলাদেশের ক্রেতারা ভারত থেকে সোনার অলংকার কিনতে উৎসাহিত হচ্ছেন। বর্তমানের ভ্যাট হারের হিসাবে, বাংলাদেশ থেকে একজন ক্রেতা ১০ লাখ টাকার সোনার অলংকার কিনলে ৫০ হাজার টাকা ভ্যাট দিতে হয়। আর ভারত থেকে একই পরিমাণ সোনার অলংকারে ভ্যাট ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে করোনার কারণে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভারতে যাচ্ছেন না বাংলাদেশি ক্রেতারা। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আবার তাঁরা ভারতমুখী হবেন।

এনামুল হক খান
পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে ভ্যাটের হার অসামঞ্জস্য হওয়ার কারণে আমরা ২ হাজার কোটি টাকার বাজার হারাচ্ছি। ভ্যাটের হার দেড় শতাংশ করা হলে আমরা সোনার দামের সঙ্গে সেটি যুক্ত করে দেব।
এনামুল হক খান সভাপতি জুয়েলার্স সমিতি

সমিতির নেতারা আনুমানিক একটি হিসাব দিয়ে জানান, দেশের সোনার অলংকারের গ্রাহক প্রায় ৪ কোটি। তার মধ্যে দেশ থেকে ক্রয় করেন ৭৫ শতাংশ। আর বিদেশ থেকে কেনেন ২৫ শতাংশ। বর্তমানের অবস্থা চলমান থাকলে ১০ বছর পর বিদেশ থেকে সোনার অলংকার কেনার গ্রাহকের সংখ্যা ৪০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।

অন্যদিকে সোনা আমদানিতে প্রতি ভরিতে (১১.৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক ১ হাজার টাকা কমানোর বিষয়ে সমিতির যুক্তি হচ্ছে, ২০১৯ সালে ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে সোনা আমদানির জন্য ডিলার লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবে নানা জটিলতায় বার্ষিক প্রায় ৩০ মেট্রিক টন সোনার চাহিদার বিপরীতে ৫০ কেজির বেশি সোনা আমদানি করা সম্ভব হয়নি। তার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে উচ্চ শুল্ক। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও আছে। তবে শুল্ক হ্রাস করা গেলে উৎপাদন খরচ কমবে। তখন দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। কারণ, বাংলাদেশি কারিগরদের তৈরি সোনার অলংকারের চাহিদা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। তা ছাড়া শুল্ক হ্রাস করা হলে আমদানি বৃদ্ধি পাবে। সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে বলে দাবি করেছে সমিতি।

জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে ভ্যাটের হার অসামঞ্জস্য হওয়ার কারণে আমরা ২ হাজার কোটি টাকার বাজার হারাচ্ছি। ভ্যাটের হার দেড় শতাংশ করা হলে আমরা সোনার দামের সঙ্গে সেটি যুক্ত করে দেব। তাতে ফাঁকিবাজি বন্ধ হবে। সরকারও বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারবে।’