দেশে ট্যানারির সংখ্যার তুলনায় এলডব্লিউজি সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কম

এম আবু ইউসুফ

দেশে নতুন করে আরেকটি কারখানা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। তবে দেশের মোট ট্যানারির সংখ্যার তুলনায় এটি অনেক কম। বিশেষ করে সাভারে অবস্থিত চামড়াশিল্প নগরীর ট্যানারিগুলো এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এর প্রধান কারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সুরক্ষায় দুর্বলতা।

আমার জানামতে, এই মুহূর্তে চামড়াশিল্প নগরীর অন্তত ১২ থেকে ১৫টি ট্যানারির এলডব্লিউজি সনদ পাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় যোগ্যতা রয়েছে। কেবল শিল্পনগরীর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) ঠিক না থাকায় ট্যানারিগুলো এ সনদের জন্য আবেদনই করতে পারছে না।

আরেকটি লক্ষণীয় দিক হলো, এখন পর্যন্ত এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া ট্যানারির সব কটিই চামড়াশিল্প নগরীর বাইরে অবস্থিত। তারা সবাই নিজ উদ্যোগে ইটিপি স্থাপন করেছে। এ কারণে এলডব্লিউজির শর্ত পূরণ ও সনদ পাওয়া তাদের জন্য অনেক সহজ হয়েছে। অন্যদিকে চামড়াশিল্প নগরীতে সব ট্যানারির জন্য একটিমাত্র সিইটিপি রয়েছে, যা শুরু থেকেই কমপ্লায়েন্স অনুযায়ী কাজ করছে না।

এলডব্লিউজি সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে মোট ১ হাজার ৭১০ নম্বরে মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ নম্বর থাকে কারখানাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে। আর ৩০০ নম্বর থাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত। কিন্তু এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শর্ত পূরণের ক্ষেত্রেই আমাদের শিল্পনগরীতে অবস্থিত ট্যানারিগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। সাভার শিল্পনগরীতে থাকা সিইটিপি শুরু থেকেই কার্যকর নয়। পাশাপাশি এ শিল্পনগরীর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও পরিবেশসম্মত উপায়ে করা হয় না।

আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় চামড়াসম্পদ রয়েছে। চামড়ার পাশাপাশি এ খাতের মজুরিও তুলনামূলক কম। কিন্তু এসব সুবিধা আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। এ জন্য এলডব্লিউজি সনদ পেতে শিল্পনগরীর ট্যানারি ও সরকারি কর্তৃপক্ষকে সমান্তরালভাবে কাজ করতে হবে। ট্যানারিগুলোকে নিজেদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকেও সিইটিপির সংস্কারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এসব সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে কথা হলেও এর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

চামড়াশিল্প নগরীর দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। সংস্থাটির আরও অনেক কার্যক্রম থাকায় তারা চামড়াশিল্প নগরীতে হয়তো ঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে যোগ্য লোকেরও অভাব রয়েছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী একটি চামড়াশিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এটি ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বিদ্যমান সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্যে আমাদের অবস্থান আরও বৃদ্ধি পাবে।

  • মো. আবু ইউসুফ, অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়