বিদেশি বিনিয়োগে বড় বাধা ‘ব্র্যান্ডিং’

রূপালী চৌধুরী

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে আমাদের বড় বাধা ‘ব্র্যান্ডিং’। ব্যক্তিগতভাবে আমরা যখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলি, তখন বুঝতে পারি তাঁরা এ দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে খুব বেশি ওয়াকিবহাল নন। ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবেই তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্পর্কে ধারণা কম। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছেই আমাদের পৌঁছাতে হবে। তাঁদের কাছে দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরা দরকার। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক নানা গণমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা দরকার।

বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে এখন একধরনের মন্দাবস্থা চলছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিশ্বের বেশির ভাগ কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে না। বরং সবাই বিদ্যমান ব্যবসা ধরে রাখতেই বেশি মনোযোগী হন। এ অবস্থায় নতুন করে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ খুব বেশি বাড়বে এমন আশা করা ঠিক হবে না। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের যেসব প্রতিযোগী দেশ রয়েছে, সেগুলোর তুলনায় আমরা কোথায় কোথায় পিছিয়ে বা এগিয়ে আছি, তা-ও ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা দেখছি, বিনিয়োগের জন্য বিদেশিরা এখন ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশকে বেছে নিচ্ছেন। তাদের তুলনায় আমাদের বিনিয়োগ সম্ভাবনা কোথায় বেশি বা কোথাও পিছিয়ে আছি কি না, সেটি দেখা দরকার। আবার আমরা কোন কোন খাতে বিনিয়োগ চাই, তারও একটি তালিকা তৈরি করে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের দেশে একটি বিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছে। তাতে অভ্যন্তরীণ বাজারেরও যে বিশাল এক সম্ভাবনা রয়েছে, সেটিও বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরা দরকার।

সরকারের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক সময় ধারাবাহিকতার অভাব দেখা যায়। মাঝেমধ্যে দেখা যায়, সরকার বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি অধিক মনোযোগী। এ জন্য অনেক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। আবার কখনো রাজস্ব নীতির ক্ষেত্রে দেখা যায় তা বিনিয়োগ পরিপন্থী। করের আওতা না বাড়িয়ে বিদ্যমান করদাতাদের ওপরই চাপ বাড়ানো হয়। এতে নীতি ধারাবাহিকতার ব্যাঘাত ঘটে। এ ধরনের উদ্যোগ দেশি-বিদেশি যেকোনো বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে এমন রাজস্ব নীতি গ্রহণ করতে হবে।

রূপালী চৌধুরী
সাবেক সভাপতি, ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি