সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশে বাটার বিপুল সম্ভাবনা আছে 

বাটা শু অর্গানাইজেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সন্দীপ কাটারিয়া সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সফরকালে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ দেশে বাটার অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহাঙ্গীর শাহ

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? এই অগ্রগতির সঙ্গে পাদুকাশিল্পের সম্পৃক্ততা কেমন? 

সন্দীপ কাটারিয়া: আমি ২০২২ সালেও বাংলাদেশে এসেছিলাম। দুই বছর পর এবার এসে ব্যাপক পরিবর্তন দেখলাম। অনেক ফ্লাইওভার হয়েছে। বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল হচ্ছে। মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এর মানে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। যখন একটি দেশ এগিয়ে যায়, তখন মানুষের চলাচলও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ওই দেশের পাদুকাশিল্পও (ফুটওয়্যার খাত) এগিয়ে যায়। এই দেশের দ্রুত প্রবৃদ্ধির বিশাল সম্ভাবনার অংশ হওয়ার সুযোগ বেড়েছে পাদুকাশিল্পের। 

বাংলাদেশে বাটার বিপুল সম্ভাবনা আছে। উৎপাদনব্যবস্থায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে চায় বাটা। তাতে আমাদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি হবে। যেহেতু বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে, তাই দরকার আরও বেশি উদ্ভাবন। 

প্রথম আলো:

কোভিড মহামারির কারণে বাটার ব্যবসায়ের ওপর কেমন প্রভাব পড়েছে? 

সন্দীপ কাটারিয়া: আমরা কোভিড শুরু হওয়ার পর লকডাউনে আমাদের শোরুমগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। তখন ব্যবসায়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ভালো খবর হলো, আমরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বেচাকেনায় আমরা এখন কোভিডের আগের অবস্থায় ফিরেছি। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রভাব মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যেমন কাঁচামালের দাম বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী মানুষকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হচ্ছে। এ কারণে ক্রেতাদের জন্য মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হয়েছে। তাই নিজেদের প্রয়োজন বিবেচনা করে ক্রেতারা যাচাই–বাছাই করে কেনাকাটা করছেন। 

প্রথম আলো:

বর্তমানে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে পাদুকাশিল্পে? এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করছেন? 

সন্দীপ কাটারিয়া: ভোক্তা ও বিক্রেতা—দুই দিক থেকেই চ্যালেঞ্জ আছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেতাদের মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। এখন মূল্যস্ফীতির চাপ আছে। মানুষের আয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে। তাঁরা কেনাকাটা করার সময় এসব বিবেচনা করেন। অন্যদিকে আমরাও এ বিষয়গুলোকে দুই ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রথমত, নতুন উদ্ভাবন। এ ক্ষেত্রে আমরা ভোক্তার সন্তুষ্টিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। কিছুদিন আগে সব ঋতুতে উপযোগী আমাদের এমন আরামদায়ক জুতা বাজারে এসেছে। বেশ ভালো সাড়া ফেলেছে এটি। আমাদের উদ্ভাবন দিয়ে আমরা ভোক্তাদের জন্য ৫০০ টাকার মধ্যে পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া এখন ক্যাজুয়াল শুর (স্নিকার) প্রচলন বেড়েছে। আমরা সেই প্রচলনকে প্রাধান্য দিচ্ছি। 

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে প্রায় ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি চলছে। এমন উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের জন্য আপনাদের বিশেষ কোনো উদ্যোগ আছে কি? 

সন্দীপ কাটারিয়া: এটা আমাদের দলের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। কীভাবে ভোক্তাকে একই দামে আগের মতো আরামদায়ক ও মজবুত জুতা দেওয়া যায়, তা নিয়ে কাজ করছি আমরা। এখন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আগে কখনো বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয়নি। আমরা নতুন যন্ত্রপাতি আনছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। 

প্রথম আলো:

বাটা সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিয়ে (সিএসআর) কী করছে? 

সন্দীপ কাটারিয়া: বাটা সব সময় স্থানীয় জনগণের পাশে থাকে। সে জন্য নানা ধরনের সিএসআর কার্যক্রম নিয়ে থাকে। বাটা হলো ‘মাল্টিলোকাল’ কোম্পানি। আমরা বৈশ্বিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় জনগণের চাহিদা অনুসারে পণ্য তৈরি করি। বাটার অন্যতম সিএসআর কার্যক্রম হলো বাটা চিলড্রেন প্রোগ্রাম (বিসিপি)। এই কর্মসূচির আওতায় সারা বিশ্বে প্রায় পাঁচ লাখ শিশু নানা ধরনের সুবিধা পাচ্ছে। বাংলাদেশেও এই কার্যক্রম আছে। 

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে বাটার পরিকল্পনা কী? 

সন্দীপ কাটারিয়া: সারা বিশ্বে বাটার চলমান কার্যক্রমের মধ্যে শীর্ষ ১০টি দেশের একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিপুল প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। তাই বাটার কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। বাটার বড় ‘সোর্সিং হাব’ হতে পারে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক হিসাব বিবেচনায় বাটার ৫০ শতাংশ পণ্য নিজেদের কারখানায় তৈরি হয়। বাকিটা ‘আউটসোর্সিং’ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে নিজেদের কারখানাতেই ৮৫ শতাংশ বাটার পণ্য উৎপাদিত হয়। এদেশে বাটার কারখানায় প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি জোড়া জুতা তৈরি হয়। 

প্রথম আলো:

নতুন নতুন কোম্পানি আসায় গত দুই দশকে বাংলাদেশে বাটার বাজার অংশীদারত্ব কমেছে। কিন্তু ব্যবসা কমেনি। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন? 

সন্দীপ কাটারিয়া: আমাদের আরও বড় হওয়া প্রয়োজন। আমরা বাজার হিস্যা ফিরে পেতে কাজ করছি। কীভাবে আগের জায়গায় যাওয়া যায়, তা নিয়ে বাটার একটি দল কাজ করছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের পাদুকার বাজারের বিরাট অংশ এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের হাতে। বাজারে নতুন নতুন কোম্পানি আছে। প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের মাধ্যমে আমরা সেই অনুদ্‌ঘাটিত বাজারে প্রবেশ করব। আমরা আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণের বড় সুযোগ আছে।