ঘুষ, মন্ত্রী আর গোপন ডায়েরি: পদ্মা সেতু নিয়ে দুদকের সেই এজাহারে যা ছিল

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি

সেতু ছিল, নদীও ছিল—ঘাটতি ছিল বিশ্বাসে

নিকিতা ক্রুশ্চেভ একবার বলেছিলেন, ‘রাজনীতিবিদেরা সর্বত্রই এক। তাঁরা সব সময় সেতু তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দেন, যদিও সেখানে কোনো নদীই নেই।’ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উক্তিটি অবশ্য পুরোপুরি খাটে না। এখানে নদী ছিল, সেই নদীতে সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতিও ছিল। তবে ছিল না কেবল বিশ্বাস। অবিশ্বাসের পেছনে কারণও হয়তো ছিল। ফলে শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু হলেও এর পেছনের অনেক ঘটনা এখনো অজানা রয়ে গেছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারেই আওয়ামী লীগ পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল। যদিও ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একনেক সভায় প্রথম প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছিল। তখন ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এরপর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের সময় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে সেতু নির্মাণের ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও, দুর্নীতির অভিযোগে তা স্থগিত করে দেয়। মূলত পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগেই বিপত্তি শুরু হয়েছিল।

বিশ্বব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে, তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ঘুষ ও কমিশনের দাবি করা হয়েছিল। তাঁর নামেই কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে ঠিকাদারদের। বিশ্বব্যাংক স্পষ্ট জানায়—দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে অর্থায়ন বন্ধ থাকবে।

আরও পড়ুন

পরবর্তী সময়ে সেতু বিভাগের সচিব ও প্রকল্প পরিচালক বদল হলেও মন্ত্রী বহাল থাকেন। আন্তর্জাতিক তদন্তে আরও দুর্নীতির প্রমাণ মেলে। বিশ্বব্যাংক একাধিকবার চিঠি, প্রমাণ ও শর্ত দেয়। শেষ পর্যন্ত সরকার মন্ত্রিত্বে পরিবর্তন আনে। দুদক পরে বলে—মন্ত্রী দুর্নীতিতে জড়িত নন, কিন্তু বিশ্বব্যাংকের তদন্তে উল্টো দাবি ওঠে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক তহবিল দেওয়া বন্ধ রাখলেও সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে।

আবারও আলোচনায় সেই পদ্মা সেতুর দুর্নীতি

২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছিল, তা নতুন করে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গত মঙ্গলবার বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়মের যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ‘গায়ের জোরেই’ মামলাটি থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে যে বিভ্রান্তি ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল, সেসবের যথেষ্ট উপাদান থাকলেও শেষ পর্যন্ত আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়। মামলাটি অনেকটা ‘গায়ের জোরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে’। এ কারণে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে পরামর্শক নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে এ প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছিল বিশ্বব্যাংক। এরপর একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর এ বিষয়ে বনানী থানায় মামলা করে দুদক। মামলার সেই এজাহারে ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। মামলায় মোট সাতজনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তাঁকে গ্রেপ্তার করে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে জামিনে মুক্তি পান এবং সরকার আবার চাকরিতে ফিরিয়ে আনে। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের সন্দেহের মূল আঙুল ছিল সে সময়কার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের দিকে। তিনি প্রয়াত হয়েছেন।

‘ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে দুদকের উপপরিচালক (তৎকালীন) আবদুল্লাহ আল জাহিদ ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় যে মামলাটি করেছিলেন, সেখানে সাতজনকে আসামি করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর আদালত দুদকের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেন। এর আগে একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দুদকের পক্ষে বলা হয়েছিল যে পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের’ কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
দুদক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন তদন্তে কেউ দায়ী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগে যাঁদের আসামি করা হয়েছিল, প্রয়োজনে তাঁদের আবারও ডাকা হতে পারে। তদন্তে নতুন কোনো নাম এলে সেটিও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

২০১২ সালের এজাহারে যা ছিল

মামলাটি করা হয়েছিল ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর, বনানী থানায়। মূল অভিযোগ ছিল কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে ঘুষ দিয়ে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে। এতে বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন।
মূল অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—

• সচিব নিজের মতো করে কমিটি গঠন করে, জাপানি কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার চেষ্টা করেন।

• পরে এসএনসি-লাভালিনকে অগ্রাধিকার দিতে গোপনে দরপত্র ও তথ্য পাচার করা হয়।

• টেন্ডার মূল্যায়নে ইচ্ছেমতো নম্বর কেটে অন্যদের বাদ দিয়ে লাভালিনকে সুবিধা দেওয়া হয়।

• প্রাপ্ত তথ্য, ই–মেইল ও সাক্ষ্য থেকে ঘুষের লেনদেনের পরিকল্পনা ও পছন্দের তালিকা পাওয়া যায়।

• রমেশ শাহর ডায়েরিতে উল্লেখ আছে, কাজ পেলে কাদের কত শতাংশ ঘুষ দেওয়া হবে—সেখানে সচিবের নামও রয়েছে।

• কানাডা ও বাংলাদেশে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, প্রভাব খাটানো ও ভয়ভীতি প্রদর্শনেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

• তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসান চৌধুরীর নাম উঠে এলেও তাঁদের সংশ্লিষ্টতা এখনো নিশ্চিত নয়—তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে।

এজাহারের পূর্ণ বিবরণ

এ মর্মে এজাহার করা হয়েছে যে (১) মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক সচিব, সেতু বিভাগ/নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, ঢাকা, (২) কাজী মো. ফেরদাউস, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদীশাসন), বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, ঢাকা, (৩) মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, নির্বাহী প্রকৌশলী (ব্রিজ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স ডিভিশন-৪), সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), রমনা, ঢাকা, (৪) মোহাম্মদ মোস্তফা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট লিমিটেড (ইপিসি), বাংলাদেশে এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় উপপরামর্শক, (৫) মোহাম্মদ ইসমাইল, সাবেক পরিচালক (আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগ), এসএনসি-লাভালিন, (৬) রমেশ শাহ, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট (আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগ), এসএনসি-লাভালিন, কানাডা এবং (৭) কেভিন ওয়ালেস, এসএনসি-লাভালিন একে অপরকে আর্থিক লাভবান করার অসৎ অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক অসদাচরণ করে ও বিধিবিধান ভঙ্গ করে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম দরদাতা এসএনসি-লাভালিনকে কার্যাদেশ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দণ্ডবিধির ১৬১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারার অপরাধ করার অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেন, যা দণ্ডবিধির ১২০ (বি) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক হিসেবে এসএনসি-লাভালিন কার্যাদেশ প্রাপ্ত হলে বর্ণিত ঘুষ লেনদেন সম্পন্ন হতো।

পদ্মা সেতু
ফাইল ছবি: দীপু মালাকার
আরও পড়ুন

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানকারী টিম কর্তৃক প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি ও গৃহীত জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ড. দাউদ আহমেদকে আন্তর্জাতিক পরামর্শক এবং আবুল বাশার খানকে জাতীয় পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। তারা এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) বা অনুরোধপত্র প্রণয়ন করে। পরামর্শকদের সহায়তায় পরামর্শক নিয়োগের টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) এবং রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজালের (আরএফপি) খসড়া প্রণয়নের ব্যবস্থা করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিগত ৮/১২/২০০৯ তারিখে ইওআই চাওয়া হয়। বিগত ১৮/০১/২০১০ তারিখে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগের কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটি যথাযথ সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত ১৩টি প্রস্তাব পর্যালোচনা করে ৫টি কোম্পানির প্রস্তাবকে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। অতঃপর কমিটি কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণের অপেক্ষায় থাকে। বিগত ১৮/০১/২০১০ তারিখে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগের কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি বিলুপ্ত না করেই ০৩/০৫/২০১০ তারিখে আবারও ভিন্ন একটি কমিটির নাম প্রস্তাব করা হয়। উক্ত দ্বিতীয় কমিটি গঠনের আদেশ জারি হলেও সংশ্লিষ্ট নথিতে কোনো প্রকার কারণ না দর্শিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগের কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের লক্ষ্যে বিগত ৭/০৬/২০১০ তারিখে তৃতীয় আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু গঠিত কমিটির সভাপতি মো. সেকান্দার আলী দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে উক্ত কমিটি কাজ শুরুর করার পূর্বেই তা ভেঙে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট নথিতে প্রস্তাব উপস্থাপন ব্যতিরেকেই সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া নিজেকে আহ্বায়ক করে এবং কাজী মো. ফেরদাউসকে সদস্যসচিব করে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগের কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের লক্ষ্যে বিগত ২৩/০৬/২০১০ তারিখে চতুর্থ আরেকটি কমিটি গঠন করেন। এখানে উল্লেখ্য যে বিশ্বব্যাংকের কনসালটিং সার্ভিস ম্যানুয়েল, ২০০৬–এর বিধান অনুযায়ী যেকোনো মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। আলোচ্য ক্ষেত্রে উক্ত অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বিধিবহির্ভূতভাবে পদ্মা সেতু বিভাগের সচিব ও নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া নিজেকে কমিটির আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়মের যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ‘গায়ের জোরেই’ মামলাটি থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, চেয়ারম্যান, দুদক

চতুর্থ কমিটি বিগত ০৪/০৭/২০১০ তারিখে প্রথম সভায় মিলিত হয়। পরবর্তী সময়ে তারা প্রস্তাব মূল্যায়নের লক্ষ্যে একাধিক সভায় মিলিত হয়। উক্ত কমিটির সদস্য তরুন তপন দেওয়ান, প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম, ড. ইশতিয়াক আহমেদ, মকবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদকালে তাঁরা বক্তব্যে জানান, শুরু থেকেই সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও কাজী মো. ফেরদাউস প্রাথমিকভাবে জাপানি কোম্পানি ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডকে কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি আগ্রহ রয়েছে মর্মে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যক্ত করেন এবং কাজী মো. ফেরদাউস স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি ত্রুটিপূর্ণ মূল্যায়ন শিট প্রস্তুত করে তাতে বাকি সদস্যদের স্বাক্ষর গ্রহণের অপপ্রয়াস চালান। এই কাজে সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া কাজী ফেরদাউসের সহযোগী ছিলেন মর্মে সাক্ষ্যে প্রকাশ পায়।

অনুসন্ধানকালে সাক্ষ্য-প্রমাণে আরও দেখা যায় যে কমিটির অপরাপর সদস্যরা স্বীয় উদ্যোগে নিজ নিজ মূল্যায়ন কার্যক্রম বহাল রাখেন এবং তা চাহিবামাত্র দাখিল করার মতো অবস্থায় প্রস্তুতিপূর্বক অপেক্ষা করতে থাকেন, কিন্তু ইতিমধ্যে সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও কাজী ফেরদাউস জাপানি কোম্পানি ওরিয়েন্টাল কোম্পানি লিমিটেডকে কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে সফল হতে না পেরে তাঁরা স্বীয় স্বার্থ হাসিলের নিমিত্ত এসএনসি-লাভালিনকে কার্যাদেশ প্রদানের অপপ্রয়াস চালানো শুরু করেন।

উল্লেখ্য, কাজী মো. ফেরদাউস আরও আগে থেকেই এসএনসি-লাভালিনের প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসমাইলের সঙ্গে একটি গোপন সম্পর্ক রক্ষা করে চলতেন। ইতিপূর্বে দরপত্র দাখিল এবং খসড়া রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) প্রণয়নকালে তিনি বিভিন্ন গোপন সংবাদ ফাঁস করে দিয়ে এসএনসি-লাভালিনকে অবৈধ সুবিধা প্রদান করে আসছিলেন। বিশেষ করে তাঁর সহপাঠী ও বন্ধু রিয়াজ আহমেদ জাবেরের যোগসাজশে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে খসড়া আরএফপি ই-মেইলযোগে মো. ইসমাইলের নিকট কানাডায় প্রেরণ করেন, যাতে এসএনসি-লাভালিন অবৈধ সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম হয়। ওরিয়েন্টাল কোম্পানি লিমিটেডকে কার্যাদেশ প্রদানের নিমিত্ত সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার প্রাথমিক উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ায় কাজী মো. ফেরদাউস, মো. ইসমাইল ও সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এসএনসি-লাভালিনের পক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ইতিমধ্যে তাঁদের এই অসাধু চক্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হন মো. মোস্তফা। অতঃপর সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও কাজী ফেরদাউস মূল্যায়ন কমিটিকে (চতুর্থ কমিটি) দিয়ে এসএনসি-লাভালিনের পক্ষে কার্যাদেশ প্রাপ্তির প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু কমিটির অপরাপর সদস্যদের দৃঢ়তার কারণে তা সফলকাম হয়নি।

অতঃপর মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া কমিটির কাউকে রাজি করাতে না পেরে কমিটির সদস্যদের অবহিত না করেই একতরফাভাবে নথির সংশ্লিষ্ট নোটে ত্রুটিপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করে প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে বিগত ০৪/১১/২০১০ তারিখে আরেকটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেন। এ ছাড়া কমিটিকে পর্যাপ্ত মূল্যায়নের সুযোগ না দিয়ে তাঁর সহযোগী ও নবগঠিত মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব কাজী ফেরদাউসের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তথ্যাদি সরবরাহ না করে এবং সময়ে সময়ে বিশ্বব্যাংকের দোহাই দিয়ে মনগড়া মতে মূল্যায়ন প্রাপ্তির ব্যবস্থা করেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের নীতিমালার বিধান ভঙ্গ করে প্রকল্প পরিচালককেও পাশ কাটিয়ে মনগড়াভাবে এসএনসি-লাভালিনের পক্ষে বিশ্বব্যাংকে সুপারিশ প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। এ ক্ষেত্রে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিশ্বব্যাংকের টাস্ক টিম লিডার মাসুদ আহমেদের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ থাকা সত্ত্বেও কাজী মো. ফেরদাউস প্রকল্প পরিচালকের পরামর্শ গ্রহণ করেননি। কাজী মো. ফেরদাউস এসব তথ্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে মূল্যায়ন কমিটির কোনো সদস্যকে অবহিত করেননি।

কাজী মো. ফেরদাউস এ বিষয়–সংক্রান্ত সঠিক তথ্যাদি মূল্যায়ন কমিটিকে সরবরাহ না করায় বিধিবহির্ভূতভাবে ও উদ্দেশ্যমূলক কারণে কেবল হালক্রো গ্রুপ লিমিটেড এবং এসএনসি-লাভালিনের সিভি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এ ক্ষেত্রে উক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের সবগুলো সিভি পরীক্ষা না করে কেবল ২৭টি করে সিভি পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যায়ে এসে হালক্রো গ্রুপের দাখিল করা ইঞ্জিনিয়ার মুহির উদ্দিন আহমেদের সিভির ত্রুটি দেখিয়ে প্রাপ্ত নম্বর থেকে ২.৪০৯ কেটে দেওয়া হয় এবং অন্যদিকে এসএনসি-লাভালিনের নাহিদ আমিনের ত্রুটিপূর্ণ তথ্য থাকার কারণে প্রাপ্ত নম্বর থেকে মাত্র ১.৩৬ কমানো হয় এবং এভাবেই অতি কৌশলে কারিগরি বা আর্থিক কোনো মূল্যায়নেই সর্বোচ্চ নম্বর না পাওয়া সত্ত্বেও এসএনসি-লাভালিনকে কার্যাদেশ প্রদানের সুপারিশ প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের ব্যাপক আপত্তিতে যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন
রমেশ শাহ ও মো. ইসমাইলকে এসএনসি-লাভালিনের পক্ষে পরামর্শকের কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে অবৈধভাবে উৎকোচ প্রদানের চেষ্টা চালানোর দায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি গ্রেপ্তার করে এবং উক্ত গ্রেপ্তারকালে রমেশ শাহর একটি লিখিত ডায়েরি এবং এসএনসি-লাভালিনের বিভিন্ন কম্পিউটার পরীক্ষা করে তাঁদের ই-মেইল রেকর্ড উদ্ধার করে এবং সেগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় যে এসএনসি-লাভালিনকে অবৈধভাবে পরামর্শকের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে টেন্ডার মূল্যায়নকালে মূল্যায়ন কমিটির সদস্য কাজী মো. ফেরদৌস এবং মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছেন

আলোচ্য ঘটনার অনুসন্ধানকালে আরও তথ্য পাওয়া যায় যে এসএনসি-লাভালিনের পক্ষে কার্যাদেশ পাওয়ার নিমিত্ত প্রয়োজনীয় আয়োজন করার লক্ষ্যে এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা কেভিন ওয়ালেস, রমেশ শাহ ও মো. ইসমাইল পূর্বাপর তাঁদের অপতৎপরতা বজায় রাখেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা নানাবিধ অপপ্রয়াস এবং ষড়যন্ত্রমূলক চেষ্টা চালিয়ে বিভিন্ন সময়ে কাজী মো. ফেরদাউস, সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নীতিনির্ধারণী অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে তাঁর বন্ধু ও স্বজনদের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের উদ্যোগ নিয়ে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্য হতে দেখা যায়, রমেশ শাহ ও মো. ইসমাইলকে এসএনসি-লাভালিনের পক্ষে পরামর্শকের কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে অবৈধভাবে উৎকোচ প্রদানের চেষ্টা চালানোর দায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি গ্রেপ্তার করে এবং উক্ত গ্রেপ্তারকালে রমেশ শাহর একটি লিখিত ডায়েরি এবং এসএনসি-লাভালিনের বিভিন্ন কম্পিউটার পরীক্ষা করে তাঁদের ই-মেইল রেকর্ড উদ্ধার করে এবং সেগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় যে এসএনসি-লাভালিনকে অবৈধভাবে পরামর্শকের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে টেন্ডার মূল্যায়নকালে মূল্যায়ন কমিটির সদস্য কাজী মো. ফেরদৌস এবং মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছেন। এ ক্ষেত্রে কাজী মো. ফেরদৌস টেন্ডার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এসএনসি-লাভালিনকে গোপনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করেছেন এবং তাদের টেন্ডারকে উপযোগী করার জন্য কী করতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন।

এতদ্ব্যতীত, টেন্ডার প্রক্রিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি মো. ইসমাইলের সঙ্গে নিউইয়র্কে দেখা করেছেন এবং সিভি ভেরিফিকেশনের বিষয়ে শর্ত পূরণে এসএনসি-লাভালিনকে সহায়তা করেছেন। মে ২০১১–এর শেষার্ধে এবং জুন ২০১১-এর প্রারম্ভে আদান-প্রদান করা ই-মেইল থেকে দেখা যায় যে এসএনসি–লাভালিনকে সিভি ভেরিফিকেশনের বিষয়ে শর্ত পূরণে ফেরদৌস সহায়তা করেছেন। এ বিষয়টি জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে এবং শেষার্ধে আদান-প্রদান করা ই-মেইল থেকেও প্রতিভাত হয়। ১৯.০৬.২০১১ তারিখে মোহাম্মদ মোস্তফা কেভিন ওয়ালেসকে জানান, সিভি ভেরিফিকেশন বিষয়ে আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমপ্লায়েন্স ব্যতিরেকেই বিবিএ চূড়ান্ত সুপারিশ প্রেরণ করেছেন। অধিকন্তু ২৯.৬.২০১১ তারিখে রমেশ শাহকে মোস্তফা জানান যে ‘যদিও বিবিএ তাদের সুপারিশ প্রেরণ করেছে, তথাপি রেকর্ড সংরক্ষণের স্বার্থে তাদের...প্রয়োজন...দয়া করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিন, তা না হলে, ফেরদৌস বিপদের সম্মুখীন হবেন।’ এ ছাড়া জব্দকৃত রমেশ শাহর নোটবুকে যেসব সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিকে কাজ পাওয়ার পর পদ্মা পিসিসি (প্রোজেক্ট কমার্শিয়াল কস্ট/প্রোজেক্ট কমিটমেন্ট কস্ট) হিসেবে দরপত্র মূল্যের বিভিন্ন পার্সেন্টেজ প্রদানের বিষয় উল্লেখ আছে তাতে সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত আছে।

আরও পড়ুন

অধিকতর প্রমাণাদি থেকে দেখা যায় যে মোহাম্মদ ইসমাইলের চাকরিচ্যুতির পর আস্থা পুনঃস্থাপনের নিমিত্ত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এসএনসি-লাভালিনের কেভিন ওয়ালেসের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে কথা বলতে চেয়েছিলেন। এরপর পদ্মা সেতু এবং অন্য একটি প্রকল্প নিয়ে মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার পরামর্শ ও উদ্যোগে অন্যদের সঙ্গে একটি মিটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। যেমন মোহাম্মদ ইসমাঈলের চাকরি চ্যুতির পর ১০.৪.২০১১ তারিখে ইপিসির মোহাম্মদ মোস্তফা এসএনসি-লাভালিনের কেভিন ওয়ালেসের নিকট একটি গোপনীয় ই-মেইল প্রেরণ করেন। ই-মেইলে উক্ত চাকরিচ্যুতি এসএনসি-লাভালিনের ওপর ক্লায়েন্টের আস্থা হারানোতে ভূমিকা রাখছে মর্মে জানানো হয় এবং যত দ্রুত সম্ভব আস্থা পুনঃস্থাপন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ ছাড়া মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর সঙ্গে জরুরি আলোচনার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। পরবর্তী সময়ে মোহাম্মদ মোস্তফা, রমেশ শাহ ও কেভিন ওয়ালেসের জন্য বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের (মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ) সঙ্গে ঢাকায় সাক্ষাতের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোহাম্মদ মোস্তফা, রমেশ শাহ ও কেভিন ওয়ালেস ২৯.৫.২০১১ তারিখে ঢাকায় বৈঠক করেন। অতঃপর ১৯.০৬.২০১১ তারিখে যথাযথভাবে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এসএনসি-লাভালিনের অনুকূলে কার্যাদেশ দেওয়ার সুপারিশ করে।
অনুসন্ধানকালে আরও দেখা যায়, দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের বিভিন্ন পর্যায়ে তদানীন্তন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এসএনসি-লাভালিন এবং অন্যান্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎকার প্রদান করেছেন।

এসএনসি-লাভালিনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রীর সাক্ষাতের ক্ষেত্রে আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যোগাযোগ স্থাপনকারীর ভূমিকা পালন করেন। তা ছাড়া রমেশ শাহর নোটবুকে কাজ পাওয়ার পর পদ্মা পিসিসি (প্রোজেক্ট কমার্শিয়াল কস্ট/প্রোজেক্ট কমিটমেন্ট কস্ট) হিসেবে দরপত্রমূল্যের বিভিন্ন পার্সেন্টেজ প্রদানের হিসাবে তাদের বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। তবে, আলোচ্য ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনা–সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনে মো. আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার ও সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রীর ভূমিকা রাখার বিষয়ে অপরাপর সাক্ষীদের সাক্ষ্য, পরিপূরক সাক্ষ্য এযাবৎ অনুসন্ধানকালে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। অপরাধ সংঘটনে মো. আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার ও সৈয়দ আবুল হোসেনের অপরাধসংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্তকালে খতিয়ে দেখা হবে।

দুদক নতুন করে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিলেও এখানে একটি তথ্য উল্লেখ করা যায়। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলকে কানাডার ২০১৭ সালে অন্টারিও প্রদেশের একটি আদালত আদালত খালাস দিয়েছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে কানাডার কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল এবং এর প্রেক্ষিতে কানাডার পুলিশ ২০১১ সালে এসএনসি-লাভালিনের দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারও করে। তবে, কানাডার আদালত দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর, ২০১৭ সালে, এসএনসি-লাভালিনের তিন কর্মকর্তাকে খালাস দেন এবং অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় মামলাটি খারিজ করে দেন। এই মামলায় যাদের খালাস দেওয়া হয়, তারা হলেন: কেভিন ওয়ালেস, রমেশ শাহ, জুলফিকার আলী ভূঁইয়া।