অর্থনীতি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোচ্ছে

জাহিদ হোসেন

কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্থবিরতা চলছে। ৩–৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, যা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। অর্থনীতির সূচকগুলো ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা বলা যাবে না। তবে পতন ঠেকেছে।

অর্থনীতি এগোচ্ছে, কিন্তু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোচ্ছে। কয়েক বছর ধরে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে যে স্থবিরতা ছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না।

এই স্থবিরতার অন্যতম কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। এখন রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তাও আছে। নির্বাচন নিয়ে উদ্যোক্তারা আশাবাদী। তবে পকেটে হাত দেওয়ার (বিনিয়োগ করা) মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সার্বিকভাবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে যায়নি, তবে কাটার পথে হাঁটছে। নির্বাচনী ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর হবে কি না, তা–ও বিবেচনায় রাখছেন উদ্যোক্তারা।

অর্থনীতির শ্লথগতির কারণ হিসেবে আরও তিনটি কারণ আছে। এগুলো হলো জ্বালানিসংকট; আর্থিক খাতের দুরবস্থা; মানুষের কেনাকাটার সক্ষমতা দুর্বল; বৈশ্বিক অর্থনীতির চলমান অনিশ্চয়তা।

জ্বালানিসংকট বিনিয়োগের প্রধানতম সমস্যা। এটি পুরোনো ও জানা সমস্যা। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুর্বলতার কারণে উদ্যোক্তারা চাহিদা অনুসারে বিনিয়োগ করতে পারেন না। এখানে শুধু সুদের হার বিনিয়োগ আকর্ষণে বড় সমস্যা নয়। অর্থায়নের প্রাপ্যতা দুর্বলতাও (অ্যাকসেস টু ফাইন্যান্স) বিনিয়োগে বড় সমস্যা। ব্যাংক খাত ছাড়া অন্য কোনো খাত থেকে বিনিয়োগের অর্থ পাওয়ার সুযোগ সীমিত।

এ ছাড়া বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের বেশি। কিন্তু মজুরি মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। তাই মানুষের কেনাকাটার ক্ষমতা কমে গেছে। অন্যদিকে কর্মসংস্থান পরিস্থিতিতেও তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পাওয়ায় চাকরির সুযোগ বাড়ছে না।

বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা চলমান। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাণিজ্যের পতন হতে পারে। কারণ, বিশ্বব্যাপী পণ্যের চাহিদা কমেছে। বিদেশি ক্রেতারা এখনো ঠিক করতে পারছেন না, তাঁরা কোথা থেকে পণ্য কিনবেন। এতে আমাদের পোশাক খাতও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কারণ, বিদেশি ক্রেতারা এখন দ্বিধাগ্রস্ত।

  • জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ বিশ্বব্যাংক, ঢাকা কার্যালয়