কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিতে হবে: মাসরুর রিয়াজ

মাসরুর রিয়াজ, চেয়ারম্যান, পলিসি এক্সচেঞ্জপ্রথম আলো

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট একটি সংবেদনশীল পটভূমিতে আসতে যাচ্ছে। দেশে ২০২২ সালে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জটি শুরু হয়। এর তৃতীয় বছরে এসেও অনেক জায়গায় সে সংকটের ব্যাপ্তি রয়েছে। যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে, ১৮-১৯ মাস ধরে আমদানিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আসন্ন বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।

বর্তমানে প্রধান তিনটি সংকট হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। বাজেট বড় হলে বাজারে মুদ্রার সরবরাহ বাড়বে। তাতে মূল্যস্ফীতি ও চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।

বাজেটের আকার কিছুটা ছোট হলে সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধি হয়তো কিছুটা কম হবে। তবে আমি মনে করি, এ বছর প্রবৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এতটাই কঠিন যে এগুলো আগে বাগে আনতে হবে। এতে সরকারি বিনিয়োগ ও ব্যয় যদি কমও হয়, তাতে লজ্জার বা ক্ষতির কিছু নেই।

বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান—দুই জায়গাতেই নজর দিতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার তুলনায় বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কম। আবার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের হারও সুখকর নয়। এভাবে আমরা একধরনের বিনিয়োগ ফাঁদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। এবার বাজেট ছোট হলেও কর্মসংস্থানকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতকে কীভাবে উৎসাহিত করতে পারি, বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে পারি, তা দেখতে হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ, অবকাঠামো বা অর্থায়নের অসুবিধা দূর করতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। তবে গত এক-দেড় বছরে আমাদের ঋণ ব্যবস্থাপনা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সরকারের উন্নয়ন বাজেটের প্রায় পুরোটাই ঋণ করে চালাতে হচ্ছে। এতে দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সেটি আবার রিজার্ভে প্রভাব ফেলছে। সামনের দিনে মুদ্রার আরও অবনমন হলে ঋণ পরিশোধও ব্যয়বহুল হবে। এ জন্য রাষ্ট্রীয় ঋণ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দিতে হবে। সে আলোকে বাজেট ও খরচ সাজাতে হবে।

সরকারি ব্যাংকে অব্যবস্থাপনার কারণে অর্থ লুণ্ঠিত হচ্ছে। এরপর বাজেটের মাধ্যমে সরকারি টাকাতেই ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানো হয়, যাতে তারা আরও ঋণ দিতে পারে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেরিতে হলেও সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এর কারণে ব্যবসার খরচ বাড়ছে। এটা দুঃখজনক। তবে ব্যবসাকে মসৃণ রাখতে বাজেটে সহায়ক কর ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে। করহার ও কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে। বাজেটে এ জায়গায় নজর দেওয়া দরকার।