ভিয়েতনাম রপ্তানি খাতে গত কয়েক দশকে দুর্দান্ত উন্নতি করেছে। এ জন্য তারা যে সংস্কার করেছে, তার মধ্যে নীতি প্রণয়নের সঙ্গে নীতি বাস্তবায়নের বিষয়টিও রয়েছে। নীতি বাস্তবায়নে তারা রাষ্ট্রের দক্ষতা ও সক্ষমতা দেখিয়েছে। বাণিজ্যনীতি, রপ্তানিনীতি, শিল্পনীতি কিংবা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের সংস্কারগুলো করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা দরকার, সেখানে ভিয়েতনাম বেশ উৎকর্ষ সাধন করেছে। সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করেছে। এর ফলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভিয়েতনাম একটি আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে।
ভিয়েতনামে কখনো এমন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়নি যে নীতি আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। যে সমস্যাটি আমরা বাংলাদেশে প্রায়ই দেখি। নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্যতা, ধারাবাহিকতা ও নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেই ভিয়েতনাম একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছে।
ভিয়েতনামের সাফল্যের আরেকটি বড় দিক হলো দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি তারা একই সঙ্গে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে গভীর সংস্কার করেছে। এতে অর্থনীতি যখন ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হয়েছে অর্থাৎ বিদেশি বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ শ্রমশক্তির চাহিদা তৈরি হয়েছে, তখন সেই চাহিদা পূরণ করার সক্ষমতা দেশটি অর্জন করতে পেরেছে। অর্থনীতি, শ্রমবাজার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—এই খাতগুলো ভিয়েতনামে প্রায় একই গতিতে এগিয়েছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অবশ্য চিত্রটি ভিন্ন। কৃষি ও মৎস্য খাতে আমাদের সাফল্য রয়েছে। তবে আমরা প্রক্রিয়াজাতকরণে যেতে পারিনি। একজন উদ্যোক্তা মাছ বা কৃষিপণ্য উৎপাদনে সফল হলেও সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে দেশি কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে নিতে যে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা, দক্ষতা, ব্যাংকঋণ, অবকাঠামো ও সরবরাহব্যবস্থা দরকার, তা আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।
উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রথম ধাপে তুলনামূলক কম দক্ষতা ও কম প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা লাগে। তবে দ্বিতীয় ধাপে যেতে হলে বিশেষায়িত দক্ষতা ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সফল হয়নি। তবে ভিয়েতনাম শুধু দ্বিতীয় ধাপে থেমে না থেকে তৃতীয় ধাপে গিয়ে ইলেকট্রনিকস, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনভিত্তিক শিল্পে প্রবেশ করেছে। ভিয়েতনাম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পথেও গেছে। তারা নিজেদের বাজার উন্মুক্ত করেছে।
ভিয়েতনাম থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা নিতে পারে। আর্থিক খাত, করব্যবস্থা, বাণিজ্যনীতি ও শিল্পনীতিতে সংস্কার এখন অপরিহার্য। এসব সংস্কার বাস্তবায়নে আন্তরিকতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বড় বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও বিদেশি বিনিয়োগের সুফল পেতে হলে দেশের অভ্যন্তরে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ব্যবসার বাধা দূর করতে হবে।
সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম