এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১৩.৫ শতাংশ

ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ। ভারতের পরিসংখ্যান কার্যালয় (এনএসও) গতকাল বুধবার এ তথ্য প্রকাশ করে। খবর এনডিটিভি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জিডিপির ত্রৈমাসিক প্রবৃদ্ধির এই হার গত এক অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২১ সালের এপ্রিল-জুনে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ দশমিক ১ শতাংশ, তবে তা হয়েছিল তার আগের বছরের সংকোচনের সাপেক্ষে।

তবে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক ও অর্থনীতিবিদেরা এর চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক জরিপে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে স্থবির হয়ে যাওয়া অর্থনীতি আবার গতি ফিরে পেয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও পরিষেবা খাতের কার্যক্রম বৃদ্ধির ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতি পেয়েছে। একই সঙ্গে ভিত্তি বছর পরিবর্তনের কারণে প্রবৃদ্ধি অনুমিতভাবেই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর কথা। সব মিলিয়ে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই অগ্রগতি হয়েছে এবং তা আগামী প্রান্তিকেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন তাঁরা।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের ভারতীয় অর্থনীতিবিদ শীলন শাহ বলেন, প্রাপ্ত তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, আগামী প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

এনএসওর তথ্যানুসারে, বিভিন্ন পরিষেবা খাত থেকে অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন (জিভিএ) সার্বিকভাবে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য পরিষেবাগুলোর থেকে জিভিএ ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বাণিজ্য, হোটেল, পরিবহন, যোগাযোগ ও সম্প্রচার সম্পর্কিত পরিষেবাগুলো থেকে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া নির্মাণ খাতে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, জ্বালানি খাতে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ আর কৃষি ও মৎস্য খাতে জিভিএ বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ।

রাজস্ব ঘাটতি কমেছে

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব ঘাটতি কমেছে। সরকারের তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাস শেষে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে রাজস্ব ঘাটতি। গত বছর রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২১ দশমিক ৩ শতাংশ।

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ভারতের বিশাল পরিষেবা শিল্প ও ভ্রমণ থেকে বিধিনিষেধ হ্রাসের ফলে এসব খাতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে। এতে এক বছরে বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এই সময়ে ব্যক্তিগত খরচ বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ এবং সরকারি খরচ বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

তবে কয়লা, অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার, সিমেন্ট, বিদ্যুৎসহ আটটি শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমেছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-জুলাই মাসে এই বৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১১ শতাংশ, আর গত অর্থবছরে তা ছিল ২১ দশমিক ৪ শতাংশ।