ইউরোপের বাইরের মানুষের চাকরির আবেদন বেড়েছে 

চাকরির জন্য বেশি আবেদন করেছেন ভারত, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের নাগরিকেরা।

ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্য সরকার ব্রেক্সিটের পর ইউরোপের বাইরের ও বিদেশি নাগরিকদের কাজের জন্য ভিসার বিধান সহজ করেছে। তাই ইউরোপের বাইরের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে কাজ করার সুযোগ বেড়েছে। গত বছর থেকে বিদেশি নাগরিকদের চাকরির আবেদন করার প্রবণতা বেড়েছে। 

চাকরির ওয়েবসাইট ইনডিডের গত জুন মাসের পরিসংখ্যান অনুসারে, ব্রিটিশ চাকরির জন্য বিদেশি নাগরিকদের আবেদনের পরিমাণ মোট আবেদনের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ বিদেশি নাগরিকদের চাকরির আবেদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এই হার ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। খবর ইকোনমিক টাইমসের

ইনডিডের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার গবেষণা পরিচালক পাওয়েল আদ্রজানের বলেন, ইউরোপের বাইরের বেশির ভাগ আবেদনকারী উচ্চ পদের চাকরির জন্য আবেদনে বেশি আগ্রহী। বিশেষ করে তাঁদের প্রধান আগ্রহের জায়গা হচ্ছে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রেক্সিট–প্রক্রিয়া কার্যকর হওয়ার পর থেকেই মূলত এ ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। পাওয়েল আদ্রজানের আরও বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের নতুন অভিবাসননীতির উদ্দেশ্য যা ছিল, তা এখন ঠিক সেভাবেই কাজ করে চলেছে।

যেখানে ইনডিডের ওয়েবসাইটে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের চাকরি অনুসন্ধানের হার ১ দশমিক ৪, সেখানে যুক্তরাজ্যের বাইরের নাগরিকদের চাকরির আবেদনের হার প্রায় চার গুণ বেশি; অর্থাৎ ৪ দশমিক ১ শতাংশ। এটি গত জুনের হিসাব। যুক্তরাজ্যে চাকরির জন্য বেশি আবেদন করেছেন ভারত, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের নাগরিকেরা।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলেও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক শ্রমের ঘাটতি মেটানোর বিষয়ে বেশি মনোনিবেশ করেছে। দেশটির মজুরি বৃদ্ধির হারও দুই দশকের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ। ব্রেক্সিটের আগে নিয়ম ছিল এমন—কোনো কোম্পানি যদি ব্রিটিশ বা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশের কর্মী খুঁজে না পায়, তাহলেই কেবল অ-ইউরোপীয়, অর্থাৎ ইউরোপের বাইরের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিয়োগ দেওয়া যাবে। তবে ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্য সরকার ইউরোপের বাইরের কর্মীদের জন্য এই নিয়ম শিথিল করেছে। এখন নিয়ম করা হয়েছে এমন—কোনো পদের বার্ষিক বেতন ২৬ হাজার পাউন্ডের কম হলে ইউরোপের বাইরের কর্মী নিয়োগ দেওয়া যাবে।

যুক্তরাজ্য সরকার স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবার মতো অর্থনীতির কিছু নির্দিষ্ট খাতের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরের কর্মীদের জন্য ভিসা–সংক্রান্ত নিয়মগুলোও ইতিমধ্যে সহজ করেছে। কারণ, এই খাতগুলোতে তীব্র কর্মী–ঘাটতি রয়েছে, কিন্তু আতিথেয়তা, উত্পাদন ও নির্মাণের মতো অন্যান্য খাতে এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের কর্মী নিয়োগে বিধিনিষেধ বহাল আছে।

যুক্তরাজ্যের সরকারি হিসাব অনুসারে, ২০২২ সালে দেশটিতে ৬ লাখ ৬ হাজার অভিবাসী গিয়েছেন। ইনডিডের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার গবেষণা পরিচালক পাওয়েল আদ্রজানের মতে, উন্নত দেশগুলোতে অভিবাসন বৃদ্ধির জন্য দায়ী হলো শ্রমবাজার ও বয়স্ক জনগোষ্ঠী।

২০১৯ সালের পর কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে বিদেশি নাগরিকদের চাকরির আবেদন দ্বিগুণ হয়েছে; কানাডার মোট চাকরির আবেদনের ১০ দশমিক ৯ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য ১৭ দশমিক ২ শতাংশ আসছে বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে। এ তথ্য দিয়েছে চাকরিবিষয়ক ওয়েবসাইট ইনডিড। এই ওয়েবসাইটে প্রতি মাসে ৩৩ কোটি আবেদনকারী ঢুঁ মারেন।