সরকারি ব্যাংকের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র রূপালী ব্যাংক। তাই সরকারের পাশাপাশি শেয়ারধারীরাও ব্যাংকটি নিয়ে জানতে চান। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা কী?
কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম: আমি ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর রূপালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দিই। যোগদানের পরপরই দেখি ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ এক বছরে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে যেখানে খেলাপি ঋণ ছিল মোট ঋণের ২১ শতাংশ, গত বছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে। ফলে দায়িত্ব নিয়েই আমাকে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। আমার মূল কাজ হলো ব্যাংকটিকে লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা ও সেই অবস্থান ধরে রাখা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশেষ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জোর দেওয়া হয়। সে লক্ষ্যেই আমরা বছরের শুরুতেই বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছি, যা এখনো অব্যাহত। কর্মীদের প্রত্যেককে লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে; যার ভিত্তিতে তাঁদের বার্ষিক মূল্যায়ন করা হবে।
এসব কর্মসূচিতে গ্রাহকেরা কতটা সাড়া দিচ্ছেন?
ওয়াহিদুল ইসলাম: আমরা স্বল্প সুদের আমানতের দিকে বেশি নজর দিয়েছি। আমার যোগদানের সময় ২০২৪ সালে যেখানে আমানত ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা, সেটা মাঝে বেড়ে ৭৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছিল। উচ্চ সুদের আমানত আমরা কমিয়ে ফেলছি। এতে আমানত কমে এখন ৭৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই বছর এখন পর্যন্ত ৬ লাখ নতুন হিসাব খোলা হয়েছে।
স্বল্প সুদে আমানত সংগ্রহের পাশাপাশি আমি প্রথম থেকেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বিতরণে বেশি মনোযোগ দিয়েছি। তাতে এই বছর এখন পর্যন্ত ঋণ ৫১ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের ঋণের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ও আমানতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। আমরা ঋণ আদায়ে বেশি জোর দিয়েছি, এ জন্য ঋণ কমে গেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে। খেলাপি ঋণ কমে এসেছিল, এখন নতুন ঋণ নীতিমালার কারণে আবার বেড়েছে। আমরা সারা দেশেই ঋণ আদায়ের জন্য সম্মেলন করেছি। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা আশাবাদী যে খেলাপি হয়ে পড়া ক্ষুদ্র ও পল্লি ঋণগুলো আদায় হয়ে যাবে। এ ছাড়া আমরা এখন প্রবাসী আয় সংগ্রহে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছি, আগে ২১তম অবস্থানে ছিল রূপালী ব্যাংক।
নীতি সহায়তার মাধ্যমে দেড় যুগ আগে খেলাপি হওয়া ঋণ নিয়মিত করা হচ্ছে। আবার পুনঃ তফসিলে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব ঋণের আসলে ভবিষ্যৎ কী?
ওয়াহিদুল ইসলাম: দেখুন, একটি রাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন পরিবেশগত, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশ্ব অর্থনীতি এবং মহামারি, গ্যাস–বিদ্যুতের সুবিধা। এসব বিষয়ে একজন ব্যবসায়ীর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না, যা তাঁর ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলে। পরিস্থিতির বিবেচনায় সবাই খারাপ নয়। এ কারণেই নীতি সহায়তা দিয়ে ঋণ নিয়মিত করা হচ্ছে। আমরা আশা করি, সবকিছু ঠিক থাকলে তাঁরা দায় পরিশোধ করতে পারবেন। এবার অনেকে দায় পরিশোধের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
আমানত সংগ্রহ ও ঋণের বাইরে আপনারা নতুন করে মোবাইলে আর্থিক সেবা চালু করতে যাচ্ছেন। এর কী সুবিধা মিলবে?
ওয়াহিদুল ইসলাম: আমরা রূপালীক্যাশ নামে নতুন সেবা চালু করতে যাচ্ছি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু রূপালী ব্যাংকের এই সেবার জন্য লাইসেন্স রয়েছে। এত দিন আমরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এ সেবা পরিচালনা করতাম। এখন আমরা নিজস্ব উদ্যোগে সেবাটি নিয়ে আসছি। রূপালী ক্যাশের মাধ্যমে মোবাইল দিয়েই টাকা জমা করা, টাকা স্থানান্তর, বিল পরিশোধ, টিকিট, মাশুল সংগ্রহসহ সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। বিকাশ ও নগদে যেসব সেবা পাওয়া যায়, রূপালীক্যাশে তার সবই মিলবে। আমরা বাজারে ভালোভাবে প্রবেশ করতে চাই। এ জন্য আমরা এজেন্ট ও পরিবেশকদের অন্যদের চেয়ে একটু বেশি কমিশন দিচ্ছি। এ ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে টাকা ওঠানোর জন্য মাশুলও অন্যদের চেয়ে কম হবে। কম খরচে সেবা দেবে রূপালীক্যাশ।
এ ছাড়া আর নতুন কী উদ্যোগ নিচ্ছে রূপালী ব্যাংক?
ওয়াহিদুল ইসলাম: আমি যোগদানের পর প্রযুক্তির উন্নয়নের দিকে বেশি জোর দিয়েছি। ডিজিটাল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং বা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের প্রতি আমাদের মনোযোগ বেশি। আমরা রুপালী অ্যাপস চালু করেছি, যার মাধ্যমে ঘরে বসে গ্রাহকেরা সেবা পাচ্ছেন। এ ছাড়া আমরা ন্যানো ক্রেডিট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমাদের হিসাবধারীরা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মুহূর্তে নিতে পারবেন। এটি চালু হতে আরও পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগতে পারে। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডও চালু করা হবে। বাণিজ্য অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমরা সেন্ট্রালাইজড এলসি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সারা দেশের ইমাম-মুয়াজ্জিমদের বেতন এখন রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে হচ্ছে।