সাক্ষাৎকার: রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত

রাতারাতি প্রণোদনা বাদ দিলে আমরা সমস্যায় পড়ব

এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি হিসেবে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বা ভর্তুকি কমানোর প্রথম ধাপে সরকার বিভিন্ন পণ্যে ১০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা কমিয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের পাঁচটি পণ্যে প্রণোদনা বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে রপ্তানিকারকেরা ক্ষোভ জানান। তবে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এটা ইতিবাচক। এ নিয়ে কথা বলেছেন বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার। 

প্রথম আলো:

রপ্তানিতে প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্তে বস্ত্র খাতে কি কোনো প্রভাব পড়বে?

মোহাম্মদ আলী: দেশীয় বস্ত্রকলের সরবরাহ করা সুতা ও কাপড়ের কারণে নিট পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন অনেক দূর এগিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নগদ সহায়তা পাওয়ার ফলে পশ্চাৎমুখী সংযোগ শিল্পের ভিত শক্ত হয়েছে। হঠাৎ করে সরকার নগদ সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিল। প্রজ্ঞাপনে বলা হলো, ধীরে ধীরে নগদ সহায়তা কমানো হবে। তবে আমরা দেখলাম দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১ শতাংশ। আবার পাঁচটি এইচএস কোড উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এগুলো রপ্তানিতে প্রণোদনা পাওয়া যাবে না। ধাপে ধাপে প্রণোদনা কমানোর কথা বলে আবার পাঁচটি পণ্যে প্রণোদনা বাতিল করাটা একধরনের প্রতারণার মতো। এটি কেন করা হলো? এই পাঁচটি এইচএস কোডের পণ্যের সঙ্গে দেশীয় বস্ত্র খাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশীয় বস্ত্র খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এসব পণ্যের রপ্তানিও আমদানিনির্ভর হয়ে যাবে।

প্রথম আলো:

বছরের পর বছর প্রণোদনা পেয়ে আসছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। আর কতকাল এই সুবিধা থাকা দরকার বলে আপনার মনে হয়? 

মোহাম্মদ আলী: একসময় ২৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। সেটি কমতে কমতে আজ এই পর্যায়ে এসেছে। ধাপে ধাপে কমালে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। আমরা সেটাই চাই। কিন্তু রাতারাতি প্রণোদনা বাদ দিলে আমরা সমস্যায় পড়ব। রপ্তানিও কমে যাবে। এমনিতেই আমরা বাড়তি দাম দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছি না। ব্যাংকঋণের সুদের হারও বাড়তি। আমদানি করতে গেলে ডলারের দাম দিতে হয় ১২৫ টাকা, অথচ পণ্য রপ্তানি করে অর্জিত ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১১০ টাকা। সব মিলিয়ে আমরা কঠিন সময় পার করছি। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে প্রণোদনা বন্ধ করলে ভালো ফল বয়ে আনবে না। তা ছাড়া ডলার–সংকটের কারণে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ আছে। ফলে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে। অনেক উন্নত দেশও রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। ভারত রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশও তুলা চাষে ভর্তুকি দেয়।

প্রথম আলো:

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে সরকার প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে আপনাদের চাওয়া কী?

মোহাম্মদ আলী: প্রণোদনা পেতে আমাদের ১ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়। আবার ১০ শতাংশ কর কাটা হয়। যতটুকু প্রণোদনা ছিল, সেটিও রাতারাতি উঠিয়ে নিলে দেশীয় বস্ত্র খাত টিকবে না। শুধু তা–ই নয়, আমদানি সক্ষমতা নেই, এমন রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাও বন্ধ হবে। ফলে আমাদের দাবি হচ্ছে, এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যন্ত প্রণোদনা ধাপে ধাপে কমানো হোক। অন্যদিকে ব্যবসার খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমাদের ব্যাংকঋণের সুদের হার বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় লুক্কায়িত অনেক খরচ রয়েছে, যা আমাদের ব্যবসায়ের ব্যয় বাড়াচ্ছে। এসব কমানো গেলে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ত।