সাক্ষাৎকার

প্রযুক্তিতে বিনিয়োগে মুনাফাও বাড়ে

দেশের পুরোনো ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি পূবালী ব্যাংক, প্রতিষ্ঠা ১৯৫৯ সালে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে গত বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেন মোহাম্মদ আলী। ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব

প্রথম আলো:

ব্যাংকের কার্ড, মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস), ইন্টারনেট ব্যাংকিং, অ্যাপসসহ দেশে ডিজিটাল লেনদেনে অনেকগুলো সেবা চালু হয়েছে। এসব সেবার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। আসলে আর্থিক সেবা কতটা ডিজিটাল হলো?

মোহাম্মদ আলী: ডিজিটাল আর্থিক সেবার প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশের মতো। পূবালী ব্যাংক কিছুটা পরে ডিজিটাল সেবা এনেছে। এ জন্য আমাদের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪০ শতাংশ। গ্রাহকেরা এখন ডিজিটাল সেবায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। আগে শুধু বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল দিতে ব্যাংকে বিশাল লাইন লেগে থাকত, এখন সেই লাইন দেখা যায় না। মানুষ কোনো না কোনো সেবার মাধ্যমে ঘরে বসে ডিজিটাল উপায়ে সেই বিল পরিশোধ করছেন।

প্রথম আলো:

গ্রাহকেরা কতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেবাটি গ্রহণ করছেন?

মোহাম্মদ আলী: একসময় ডিজিটাল আর্থিক সেবায় ভীতি কাজ করলেও এখন তা নেই। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সেবাটি গ্রহণ করছেন। রাজধানীর সুপারশপগুলোতে দেখেন, বেশির ভাগ মানুষ কার্ড ও এমএফএস দিয়ে বিল পরিশোধ করছেন। এ ছাড়া বড় লেনদেনও অনেক ডিজিটাল মাধ্যমে হচ্ছে।

প্রথম আলো:

ডিজিটাল সেবা দিতে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। বিনিয়োগও করছে ব্যাংকগুলো। এটা কি পর্যাপ্ত?

মোহাম্মদ আলী: ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রাহকের অর্থ ও তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ জন্য পৃথিবীর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত। এই খাতে বিনিয়োগ করতেই হবে। আমাদের ব্যাংকের নগদ টাকা জমা ও উত্তোলন–সুবিধায় বছরে খরচ হয় ২৪০ কোটি টাকা। আমি যদি অর্ধেক গ্রাহক কমিয়ে আনতে পারি, তাহলে ৪০-৫০ কোটি টাকা প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করলেই হবে। এই খরচ বারবার করতে হবে না, অনেক দিন চলবে। এখন ভালো ব্যাংকগুলো এই খাতে বিনিয়োগ করছে।

প্রথম আলো:

কার্ড থেকে অ্যাপ—ডিজিটাল সেবার দ্রুত পরিবর্তনও হচ্ছে। গ্রাহকেরা কোনটাকে বেশি গ্রহণ করছেন?

মোহাম্মদ আলী: কার্ড থেকে অ্যাপে যাচ্ছেন, এর যৌক্তিক কারণও আছে। কার্ডে টাকা উত্তোলন করতে ১ থেকে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ খরচ দিতে হয়। কিন্তু অ্যাপে এই খরচ নেই বললেই চলে। যাঁরা ছোট ব্যবসায়ী, বিশেষ করে চাল-ডাল বিক্রেতারা কার্ডে টাকা নিয়ে মুনাফা করতে পারবেন না। পেট্রল-ডিজেলপাম্পগুলোর জন্যও কার্ডে টাকা নিয়ে মুনাফা করা কঠিন। তাঁরা কিউআর কোডে টাকা নিলে খরচ কমে আসবে। এ জন্য সামনে কিউআর কোডনির্ভর লেনদেন বাড়বে। সারা পৃথিবীতে মোবাইল অ্যাপনির্ভর লেনদেন জনপ্রিয় হচ্ছে। সামনে ব্যাংকগুলো কার্ড দেওয়া কমিয়ে দেবে। নতুন করে কোনো এটিএম বসানো কমবে। সবাই অ্যাপকে উৎসাহিত করবে।

প্রথম আলো:

সব মিলিয়ে পূবালী ব্যাংক কেমন করছে? অবকাঠামোগত উন্নয়ন কেমন হচ্ছে? ডিজিটাল সেবায় কেমন সাড়া মিলছে?

মোহাম্মদ আলী: আমাদের ৫০০ শাখা ও ২০০ উপশাখা ও ৪৫০ এটিএম। এটিএমগুলো এখন সিআরএমে রূপান্তর করা হচ্ছে। আমানত ৬২ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। ঋণ ৫২ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। আমানত ও ঋণে ১৮-২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। আমানত গ্রাহক গত বছর বেড়েছে ২৫ শতাংশ। সাধারণত প্রতি বছর ৫-৬ লাখ গ্রাহক আমাদের ব্যাংকে যুক্ত হন। এবার ঘরে বসে অ্যাপে হিসাব খোলা যাচ্ছে। ফলে ১০-১২ লাখ নতুন গ্রাহক পাওয়ার আশা করছি। ঘরে বসে আমাদের ব্যাংকে এখন হিসাব খোলা যাচ্ছে পাই অ্যাপের মাধ্যমে। এই অ্যাপ ব্যবহার করছেন পৌনে দুই লাখ গ্রাহক।

প্রথম আলো:

আর্থিক সেবা ডিজিটাল হওয়ায় তথ্য ও অর্থের সুরক্ষা বড় বিষয় হয়ে এসেছে। মাঝেমধ্যে কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে। গ্রাহকের তথ্য সামনে আসছে, অর্থও খোয়া যাচ্ছে। সুরক্ষা দিতে কতটা প্রস্তুত আছে ব্যাংকগুলোর?

মোহাম্মদ আলী: গ্রাহকের তথ্যের সুরক্ষা দেওয়া ব্যাংকের বড় নৈতিক দায়িত্ব। গ্রাহকের তথ্য কাউকে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কারও তথ্য ফাঁস হয়, তাহলে বুঝতে হবে, ওই প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি নিরাপত্তায় ভালো বিনিয়োগ করেনি। প্রতিটি সেবার জন্য পৃথক পৃথক নিরাপত্তা–সেবা আছে। পৃথিবীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত হবে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করলে অন্য খাতের চেয়ে বেশি মুনাফা মেলে।