কেমন বাজেট চাই
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি
আগামী ২ জুন ঘোষিত হতে যাচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এটিই প্রথম বাজেট। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বাজেটকে ঘিরে তাই বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশাও বেশি। তাঁরা চান ব্যবসা-বাণিজ্যের পথে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করার দিকনির্দেশনা থাকবে বাজেটে। বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের বাজেট প্রত্যাশা নিয়েই এবারের মূল আয়োজন।
একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে নিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের শিল্পকারখানা ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। ফলে আমাদের প্রথম চাওয়া আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যবসাবান্ধব হোক।
চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে সরকার হঠাৎ করে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বৃদ্ধি করে। ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাকে ভ্যাট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হলেও নন-ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাকে তা সাড়ে ৭ শতাংশ। এটি আমাদের ব্যবসায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে আমাদের চাওয়া, সবার জন্য একক হারে ভ্যাট নির্ধারণ করা হোক। অন্যথায় সেটি বৈষম্যমূলক হবে।
আমরা লা রিভের তৈরি পোশাক সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করি। অনলাইনের মাধ্যমেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। তবে আমরা রপ্তানি করলেও সরকারের কোনো প্রণোদনা পাই না। তার কারণ রপ্তানিতে প্রণোদনা পেতে হলে অনেক ধরনের সনদ থাকতে হয়। তবে আমাদের অনলাইনে রপ্তানির অনেক চালান হলেও সেগুলোর আর্থিক মূল্য কম হওয়ায় এত সনদ নেওয়া আমাদের জন্য ব্যয়বহুল। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইএক্সপি ফরমও পূরণ করা যায় না। আমাদের প্রত্যাশা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের জন্য রপ্তানি প্রণোদনা পাওয়া সহজ করা হবে। এতে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান পণ্য রপ্তানিতে উৎসাহিত হবে।
ব্যবসা করতে ব্যাংকঋণ দরকার। বর্তমানে ১৪-১৫ শতাংশ সুদে ব্যবসা করে মুনাফা থাকছে না। তা ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে দোকান ও কারখানা ভাড়া, বিদ্যুতের দাম ও কর্মীদের বেতন-ভাতা বাবদ খরচ বেড়েছে। ফলে ব্যাংকঋণের সুদের হার ৯-১০ শতাংশে নিয়ে আসতে সরকারের উদ্যোগ দরকার। আমরা তৃণমূলের তাঁতি, হস্তশিল্পী ও মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে কাজ করি। তাঁদের ব্যবসা মসৃণ করার জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাহলে তাঁদের সক্ষমতা বাড়বে।
মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে, বিষয়টি আমরা প্রত্যক্ষভাবে অনুধাবন করতে চাই। আগে একজন ক্রেতা যেখানে চার-পাঁচটি পোশাক কিনতেন, সেখানে এখন কিনছেন দু-তিনটি পোশাক। অর্থাৎ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে বাজেটে উদ্যোগ দরকার।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা বাড়াতে হবে। ব্যবসায়ীরা কোথায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন, সেটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শোনা দরকার। তারপর আগামী দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য কীভাবে এগোবে, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা দরকার। এ জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা।